শ্রীমঙ্গলে মৃত হরিণ ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া ৭ যুবকের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে

পরিবেশবাদী ও বন বিভাগের দাবি, ছবির হরিণটি পরে ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে কালনী ট্রেনের ভেতর থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় পাওয়া গলাকাটা হরিণ উদ্ধারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মৃত হরিণ ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবেশবাদীরা ছবিটি পোস্ট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এর আগে গত বুধবার সকালে কালনী ট্রেনের ইঞ্জিন রুমের কাছ থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় একটি মৃত মায়া হরিণ উদ্ধার করা হয়। পরিবেশবাদী ও বন বিভাগের দাবি, ভাইরাল হওয়া ছবির ওই হরিণটি পরে ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, লাউয়াছড়ার মাগুরছড়াসংলগ্ন এলাকায় রেললাইনে পাশ দিয়ে এক ব্যক্তি কাস্তে হাতে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তাঁর পেছনে আরও ছয়জন লোক হাঁটছেন। এর মধ্যে দুজন মিলে একটি মৃত হরিণ ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ওই ছবির ব্যক্তিদের কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন

ছবিটি শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার সাখাওয়াত হোসেনকে দেখানো হয়। ছবিটি দেখে তাঁরা বলেন, ছবির ওই ব্যক্তিদের তাঁরা চেনেন না।

এর আগে গত বুধবার সকালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী ট্রেনের ভেতর একটি বস্তা দেখে রেল পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে বস্তাটি খুলে সেখান থেকে একটি গলাকাটা হরিণ উদ্ধার করা হয়। পরে হরিণটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে হরিণের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার ওসি সাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ধারণা করা হচ্ছে, লাউয়াছড়ায় ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হরিণটি আহত হয়েছে। পরে দুর্বৃত্তরা হরিণটি হত্যা করে বস্তায় ভরে ট্রেনে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

ছবির ব্যক্তিদের কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ আজাদ বলেন, ‘লাউয়াছড়ার বন্য প্রাণীরা সবদিক দিয়ে হুমকিতে আছে। বনের ভেতর দিয়ে বাস-ট্রেন এত দ্রুত চলাচল করে যে প্রায়ই প্রাণীগুলো আহত হয়, মারা যায়। এখন মায়া হরিণের বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, ট্রেনের ধাক্কায় হরিণ আহত হলে পরে ট্রেন থামিয়ে কীভাবে ওই হরিণকে ট্রেনে তোলা হলো! এর সঙ্গে ট্রেনের লোকজন জড়িত না থাকলে এটা কীভাবে সম্ভব! গতকাল থেকে হরিণ হত্যাকারী ব্যক্তিদের ছবি ফেসবুকে দেখছি। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

মৃত হরিণ উদ্ধার ও ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি সাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মৃত হরিণ ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি রেলওয়ে পুলিশে কাছে এসেছে। তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। এর আগে বুধবার বস্তাবন্দী অবস্থায় ট্রেন থেকে মৃত হরিণটি উদ্ধারের পর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বন বিভাগ এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। জিডির কপি আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

তবে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হরিণ হত্যার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি জিডি করেছি। তবে বুধবার হরিণ উদ্ধার করার পর রেলওয়ে থানা আমাদের জানায়নি। আমরা এক সাংবাদিকের কাছ থেকে জানার পর রেলওয়ে থানায় যাই। পরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তারা (রেলওয়ে থানা) আমাদের কাছে হরিণটি হস্তান্তর করে। পরে আমরা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। আমরা আশা করছি, রেল পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত করলেই সব তথ্য পাওয়া সম্ভব।’

এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ধীরগতিতে ট্রেন চালানোর দাবি জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্যে ২০ কি.মি বেগে ট্রেন চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে রেল মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেও এখনো আগের মতোই দ্রুতগতিতে ট্রেন চলছে। ২০ কি.মি বেগে ট্রেন চললে মায়া হরিণটি ট্রেনে ধাক্কা খেত না বলেই মনে হয়। আমি গতকাল রাতেও লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতেই ট্রেন চলতে দেখেছি।’