পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাছ বিক্রির ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নাটোরের গুরুদাসপুরে পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মাছ বিক্রির ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেন মাছচাষিরা। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পুরুলিয়া বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

মাছ বিক্রির ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এক পুলিশ কনস্টেবলের গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা উদ্ধারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুরে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পুকুরমালিকেরা।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম হ‌ুমায়ূন কবির। তিনি ঢাকা ডিএমপিতে কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগে কর্মরত আছেন। তাঁর পরিচিতি নম্বর বিপি ৯৬১৫১৭৭০৭৭। বর্তমানে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। হ‌ুমায়ূন গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের মো. হায়দার আলীর ছেলে।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মাছচাষিরাসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। টাকা উদ্ধারের দাবিতে তাঁরা আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপজেলার পুরুলিয়া বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া পুকুরমালিকেরা জানান, পুলিশের চাকরির পাশাপাশি মাছ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন পুলিশ সদস্য হ‌ুমায়ূন কবির। গ্রামের মাছচাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমানে রয়েছেন আত্মগোপনে। এ ঘটনায় তাঁরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী মাছচাষিরা জানান, একই গ্রামের হওয়ায় বিশ্বাস করে তাঁরা প্রায় চার বছর আগে হ‌ুমায়ূন কবিরের সঙ্গে মাছের ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতে হ‌ুমায়ূন তাঁদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। প্রথম দিকে নগদ মূল্যে লেনদেন করলেও পরে বিশ্বস্ততার সুযোগে বাকিতে মাছ নিয়ে এখন মুঠোফোন বন্ধ রেখে লাপাত্তা পুলিশের ওই সদস্য। এলাকার অন্তত ৬০ জন মাছচাষির কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার মাছ বাকি নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন হ‌ুমায়ূন।

ভুক্তভোগী আলম, ফারুক, শরিফুল, শাহাদৎ, মেহেদী, আলামিন, রইসসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার বছর ধরে এলাকায় হ‌ুমায়ূন তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসে চাষিদের অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে চড়া দামে বাকিতে মাছ কিনে লাপাত্তা রয়েছেন। শুধু গুরুদাসপুর নয়, পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া ও চাটমোহর উপজেলার শতাধিক চাষি বাকিতে মাছ বিক্রি করে প্রতারিত হয়েছেন।

পুরুলিয়ার রইস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত মাসের শুরুতে হ‌ুমায়ূনের কাছে বাকিতে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ৮ গাড়ি মাছ বিক্রি করেন। ১৫ দিন পর টাকা দেওয়ার কথা বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পলাতক রয়েছেন হ‌ুমায়ূন। তিনি টাকা ফেরতসহ তাঁর শাস্তির দাবি জানান।

একই এলাকার আলম জানান, তিনিও হ‌ুমায়ূনের কাছে ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকার ৪ গাড়ি মাছ বিক্রি করেছেন। টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাঁকে ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দেওয়া হয়। তাঁর মতো অন্তত ১০ জন চাষিকে ব্যাংকের চেক দেওয়া হয়। টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, প্রতারক হ‌ুমায়ূন আগেই ওই নম্বরের চেক বই হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তাঁরা চেক নিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

টাকা ফিরে পেতে উজ্জ্বল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জানুয়ারি গুরুদাসপুর থানায় হ‌ুমায়ূন ও তাঁর ৮ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপরদিকে মকলেছুর রহমান নামের আরেক মাছচাষি সিংড়া থানায় ও পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। এত অভিযোগের পরেও ওই প্রতারক রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হ‌ুমায়ূন কবিরের বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। বাসায় গিয়েও পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার হোসেন জানান, হ‌ুমায়ূন কবিরের নামে মাছচাষিদের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুত্বসহকারে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁকে আটকের চেষ্টাও চলছে।