যারা সমাবেশে যাচ্ছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেল নিয়ে রূপসা সেতু পার হচ্ছেন। আজ শনিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

পরিবহন ধর্মঘট ও অন্যান্য যান চলাচলে বাধার কারণে জরুরি প্রয়োজনে খুলনা যাওয়ার জন্য মানুষ হেঁটে রূপসা নদীর ওপর নির্মিত সেতু পার হচ্ছেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া অধিকাংশ মানুষের গন্তব্যই ছিল খুলনার দিকে। তবে কেউ কেউ ফিরছিলেন খুলনা থেকে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দেখে একজন অনুরোধ করছিলেন, তাঁকে বাগেরহাট নিয়ে যাওয়ার জন্য। কাঁপা কাঁপা স্বরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সমাবেশের আগে যেভাবেই হোক বাড়ি যাতি হবে। এলাকায় না থাকলে পরে বিপদ আছে।’

পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নাম নিয়েন না। ছোট একটা ব্যবসা করি। ডাক্তার দেখাতি বৃহস্পতিবার খুলনা আইছিলাম। অনেকগুলো টেস্ট দিছিল। আবার শনিবার রিপোর্ট দেখাবো, তাই এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গেছিলাম। তবে এখন এলাকায় যাতি হবে। সমাবেশ শুরুর আগে এলাকায় থাকতে হবে। তা না হলি আমি সমাবেশে আসছি, এই খবর হবে। তালি বিপদ আছে।’

রাস্তার মোড়ে মোড়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে গেছেন, যারা বিএনপি করে, রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ করা হবে। যদি বাড়িতে না পাওয়া যায়, বিপদ আছে। সবাইকে এলাকায় থাকতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ও বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র দেখিয়ে ওই ব্যক্তি জানালেন, তাঁর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নে। বাড়ি থেকে তাঁকে পরিবারের সদস্যরা মুঠোফোনে বলেছেন, ‘যারা এলাকায় নেই, তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। তারা বিএনপির সমাবেশে গেছে। বাড়ি এলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাগেরহাট সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সাত বিএনপি কর্মী এবং দুজন সাধারণ কর্মজীবীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের ভাষ্য, শান্তি চাইলে এলাকায় থাকতে বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার রাস্তার মোড়ে মোড়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে গেছেন, যারা বিএনপি করে, রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ করা হবে। যদি বাড়িতে না পাওয়া যায়, বিপদ আছে। সবাইকে এলাকায় থাকতে হবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি এলাকায় এমন ঘোষণার দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের একটি রাস্তার মোড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা সংগঠিত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ ধরনের হুঁশিয়ারি দেন। ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

যারা খুলনায় যাচ্ছেন তাদের তালিকা করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বেমরতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা
ছবি: ভিডিও থেকে

ভিডিওতে বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম (মিঠু), ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মিলন খান, বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. কবির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রুহুল আমিন, বেমরতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম মোল্লাকে দেখা যায়।

ভিডিওতে দেখা যায় জহিরুল ইসলাম বলছেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনারা কেউ ওই মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন না। যাঁরা যাঁরা করেন, আমরা তাঁদের নাম কালোতালিকার মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।’

ইব্রাহিম মোল্লা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল চারটার পর থেকে প্রত্যেক ওয়ার্ডে যেসব নেতা-কর্মী আমাদের আছে তাদের অনুরোধ করব, প্রত্যেকে এলাকায় এলাকায় তালিকা করবেন। কেউ আমাদের এখান থেকে বিভাগীয় শহর খুলনায় রওনা দিয়েছে বা গেছে কি না, এই তালিকা অবশ্যই আপনাদের করতে হবে এবং ওই তালিকা অবশ্যই আমাদের কাছে প্রেরণ করতে হবে। আমরা তখনই তার অ্যাকশন নেব। আমরা তাদের বাড়িতে যাবে। বাড়িতে গিয়ে যা বলা দরকার বলব।’

বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো তালিকা করিনি। তখন শুধু একটা বক্তব্য দেওয়া দরকার, এ জন্য বলে দিয়েছি। বিএনপির সমাবেশে কেউ যেন আগ্রহী না হয়, এলাকায় যেন কেউ গণ্ডগোল-ফ্যাসাদ না করে, সে জন্য ওই বক্তব্য দিয়ে আসছি।’

জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

গণপরিবহন বন্ধ করেও সমাবেশে মানুষের ঢল আটকাতে না পেরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষকে এভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে সমাবেশ পণ্ড করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছিল। সব বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এখন এলাকায় এলাকায় ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।