আর্জেন্টিনার জয়ে উৎসবের নগরী কুমিল্লা

জয়ের পর কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় আনন্দমিছিল করেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা
ছবি: প্রথম আলো

নান্দনিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার জয়ে উৎসবের নগরীতে রূপ নিয়েছে কুমিল্লা। সেই উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়ে লালমাই পাহাড়ের কোলে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাতভর আনন্দ–উল্লাসে মাতিয়ে রাখেন মেসি–ভক্তরা। ‘মেসি, মেসি’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথসহ সবুজে ঘেরা লালমাটির ক্যাম্পাস। কেউ ড্রোন উড়িয়েছেন, কেউ আতশবাজি ফাটিয়েছেন। ছিল ঢাকঢোলের বাদ্য ও ভুভুজেলা। আর্জেন্টিনার পতাকা উড়িয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে অবিস্মরণীয় মুহূর্তকে স্মৃতির পাতায় লিখে রাখেন ফুটবলপ্রেমীরা।

গতকাল রোববার রাত সোয়া ১২টার দিকে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ড্রোন উড়িয়ে ছবি তুলে ও ভিডিও করে আনন্দ করছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। দীর্ঘ পতাকা নিয়ে মিছিল করছেন অনেকে। নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পুবালি চত্বরে পতাকা উড়িয়ে কেউ নাচছেন, কেউ বাঁশি বাজাচ্ছেন, সেলফি তুলছেন। জয়ের পর মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী পুবালি চত্বর ঘিরে উল্লাস শুরু করেন। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে মোটরসাইকেল মিছিল নিয়ে এসে কান্দিরপাড়ে জড়ো হন তরুণ-যুবকেরা। ‘মেসি মেসি’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে রাখেন পুবালি চত্বর।

নগরের ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের ফটকের পাশে বড় পর্দায় খেলা দেখানো হয়। বাদুরতলা, পশ্চিম বাগিচাগাঁও ডায়াবেটিক হাসপাতাল এলাকা, চকবাজার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসেও হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে খেলা দেখেন। শীতের মধ্যেও মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরে তরুণ ও কিশোরেরা নাচানাচি করে।

বিভিন্ন পাড়া–মহল্লা থেকে মোটরসাইকেল মিছিল নিয়ে এসে কান্দিরপাড়ে জড়ো হন তরুণ-যুবকেরা
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও আর্জেন্টিনার সমর্থক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এমন জয়ের পর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। পুবালি চত্বরে এসে লাইভ করেছি আনন্দযজ্ঞ। হাজার হাজার মানুষ। মোটর শোভাযাত্রা, আতশবাজির ঝলকানি যেন মুগ্ধতার আবেশে জড়ানো এক মাহেন্দ্রক্ষণ।’

নগরের ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হক বলেন, ‘এমন ফাইনাল খেলা দেখার সাক্ষী হয়ে ভালো লাগছে। ইতিহাসে এমন ফাইনালের চিত্র আর হবে কি না, জানি না, তবে মেসির হাতে কাপটা দরকার ছিল। এই জয় মেসির।’

নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকা, পুলিশ লাইন সড়ক, লাকসাম সড়ক, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ সড়ক, জিলা স্কুল সড়ক, রাজগঞ্জ সড়কে মধ্যরাতের পরও যানজট লেগে যায়। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে পুরো নগরী যেন উৎসবের নগরীতে রূপ নেয়।

কুমিল্লার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে তারেক বলেন, ‘এমন টান টান উত্তেজনার খেলা জীবনে আর দেখা হবে কি না, জানি না। তবে আর্জেন্টিনার সমর্থক হিসেবে দলের জয়ের জন্য একটি রোজা রাখার নিয়ত করেছি। এ জয় মেসির।’

টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে আর্জেন্টিনার জয়ের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্র হল ও আশপাশের মেস থেকে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হন। প্রধান ফটক পেরিয়ে তাঁরা আর্জেন্টিনা ও মেসির নামে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। একে অন্যকে জড়িয়ে আনন্দাশ্রুতে ভাসেন।