ঝড়ে ইসলামপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন বিধ্বস্ত, শামিয়ানা টানিয়ে চলছে পরীক্ষা

ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিন ও বাঁশের তৈরি ভবনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তাই শামিয়ানার নিচে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার দুপুরে ইসলামপুর উপজেলার শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

ঝড়ে উড়ে গেছে বিদ্যালয়ের টিনের কক্ষ। পাশেই বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে ভাঙা বেঞ্চ আর আসবাব। সেখানেই বাঁশের খুঁটি দিয়ে শামিয়ানা টানিয়ে কয়েকটি বেঞ্চ পেতে পরীক্ষা দিতে বসেছে শিক্ষার্থীরা। প্রখর রোদ ও তীব্র গরমের মধ্যে গাদাগাদি করেই পরীক্ষা চলছে। আজ বুধবার দুপুরে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

১৬ মে রাতে কালবৈশাখীতে বিদ্যালয়টির বেশির ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিন ও বাঁশের তৈরি চার কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সব ঝড়ে উড়ে গেছে। অনেক আসবাবও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন কয়েকটি টিনের টুকরা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন (প্রথম সাময়িক) শুরু হয়। তাই বাধ্য হয়ে শামিয়ানা টানিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ফসলের মাঠের মাঝখানে জেগে থাকা ভিটায় একটি জাতীয় পতাকা উড়ছে। প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে তাঁবুর নিচে অর্ধশত শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। পাশের মাঠে কয়েকটি টিন, কিছু বাঁশ, কয়েকটি ভাঙা বেঞ্চ ও বাঁশের বেড়া পড়ে আছে।

পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাকিয়া হাসান বলে, ‘ঝড়ে আমগরে স্কুলের কিছুই রাখেনি। সবকিছু ঝড়ে উড়াইয়া (উড়িয়ে) নিয়ে গেছে। এহন মাথায় রোদ লাগে, আবার গরমে পানির পিপাসাও লাগে। যেদিন প্রথম পরীক্ষা শুরু হইলো, সেই দিন পরীক্ষার অর্ধেক সময় বৃষ্টি আইছিল। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বাড়িত গেছি। পরে বৃষ্টি কমলে আবার অর্ধেক পরীক্ষা দিছি।’

বিদ্যালয়ের পাশে পড়ে আছে উড়ে যাওয়া টিন, কিছু বাঁশ আর ভাঙা আসবাব
ছবি: প্রথম আলো

চতুর্থ শ্রেণির আরও তিন শিক্ষার্থী মিতু, আলাপি ও সারা মনি বলে, এভাবে শামিয়ানার নিচে পরীক্ষা দিতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। ঝড়ের পরদিন সকালে শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁরা আশপাশ থেকে ভাঙাচোরা আসবাব কুড়িয়ে এনেছে। এ ছাড়া নলকূপ ও শৌচাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ভোগ নিরসনে তারা দ্রুত বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সমাজের নিম্ন আয়ের ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ইসলামপুর উপজেলার পূর্ব ভেঙ্গুরা এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের অধীনস্থ হয়। এরপর থেকে শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ১৩৮ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন শিক্ষক ও একজন দপ্তরি আছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের টিনশেড একটি ভবন ছিল। সেই ভবনের মধ্যে তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিসকক্ষ ছিল। তবে এক ঝড়ে পুরো ভবনটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বসার মতো একটি চেয়ারও নেই এখন। বিদ্যালয়টি আবার দাঁড় করাতে প্রায় ছয় লাখ টাকা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মু. তানভীর হাসান বলেন, দ্রুত ওই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সচল রাখতে জরুরি ভিত্তিতে নগদ ১০ হাজার টাকা ও দুই বান্ডিল টিন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যালয়টি আবার পুরোপুরি সচল করা হবে।