মাদারীপুরে শাজাহান খানের বাড়ি ও পেট্রলপাম্প পাহারায় যুবদল নেতা, নোটিশ

মাদারীপুরে শাজাহান খানের ভাই হাফিজুর রহমান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্রল পাম্পে যুবদল নেতা ফারুক ব্যাপারীর নেতৃত্বে নেতা–কর্মীরা পাহারা দিচ্ছেনছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক হোসেন ব্যাপারীর বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সই করা একটি নোটিশের মাধ্যমে তাঁর কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাড়ি ও তাঁর ভাইদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যুবদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাহারা বসানোর পর ফারুক হোসেন ব্যাপারীকে এ নোটিশ দেওয়া হলো।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আপনি (ফারুক হোসেন ব্যাপারী), জেলা যুবদলের আহ্বায়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্বে থেকেও সংগঠনের নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন মর্মে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমতাবস্থায় সংগঠনবিরোধী এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ৩ (তিন) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়নের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে গত শনিবার মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গ্রুপে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের বাড়ি ও তাঁর ভাইদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বর্তমানে শাজাহান খান ও তাঁর ছেলে আসিবুর রহমান খান কারাগারে রয়েছেন। তাঁর ভাইয়েরা পলাতক থাকলেও মাদারীপুরে তাঁদের পরিবহন, আবাসিক হোটেল, পেট্রলপাম্পসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, আড়াল থেকে খান পরিবারের এসব ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাঁদের কর্মচারীদের পাশাপাশি বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে অন্যতম ফারুক হোসেন ব্যাপারী।

মাদারীপুর শহরের চাঁনমারি মসজিদের সামনে শাজাহান খানের ১০তলা ভবনসহ তাঁর ভাইদের চারটি বাড়ি, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পেট্রলপাম্পে কোনো ধরনের সহিংসতা ও হামলা যেন না হয়, সে জন্য যুবদল নেতা ফারুক হোসেন ব্যাপারীর নেতৃত্বে অন্তত অর্ধশত কর্মী শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহারায় ছিলেন। তাঁদের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে যুবদল নেতা ফারুক হোসেন ব্যাপারী বলেন, ‘মাদারীপুরে পাঁচটি স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা ছিল। তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো সুবিধা না নেয়, সে জন্য আমরা মাঠে ছিলাম। আমরা হাদির হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিলও করেছি, মহড়া দিয়েছি। তবে আমাদের দলে অনেক গ্রুপিং আছে। তারা কেন্দ্রে ভুল বুঝিয়েছে। শাজাহান খানের বাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য আমরা পাহারা দিইনি। এটা ভুল ধারণা। নাশকতার আশঙ্কায় আমরা পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে রাজপথে ছিলাম।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য কে এম তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারুক ব্যাপারীর ঘটনা ইতিমধ্যে জেলায় ভাইরাল। তিনি আওয়ামী লীগের বি টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে তাঁর লোকজন নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিনভর পাহারা দিয়েছেন। এতে বিএনপি ও যুবদলের ভাবমূর্তির প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়েছে।’