রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের অগ্রিম টাকা নিয়েও অনেক প্রতিষ্ঠানে বিল বাকি রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে উল্লেখ করে অগ্রিম গ্রহণ করা অর্থ সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এই শিক্ষককে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এম তারেক নূর ছাত্র উপদেষ্টা থাকাকালে বিভিন্ন কাজে ৬৭ দফায় অগ্রিম ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৫ টাকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু মাত্র ৬ লাখ ১৬ হাজার ১৮৫ টাকার সমন্বয় করেছেন। বাকি ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৭০ টাকা অসমন্বিত রয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বে থাকাকালে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেও পাওনা পরিশোধ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তাঁর বেতন থেকে অসমন্বিত অর্থ কর্তন করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
তবে এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এম তারেক নূর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। তারা চিঠির সঙ্গে কোনো প্রমাণ সংযুক্ত করেনি। প্রমাণ ছাড়া তো কোনো কিছু হয় না। এ বিষয়ে আমি গণমাধ্যমকে সংবাদ সম্মেলন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে উত্তর দেব।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এম তারেক নূর। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই পদত্যাগ করেন তিনি। পরে তাঁর জায়গায় নতুন ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদকে নিয়োগ দেন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করাসহ বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠান ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানের বরাদ্দ বাবদ অর্থ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাকে অগ্রিম দেওয়া হয়।
দায়িত্বে পালনকালে জাতীয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, আলোকসজ্জা ও খাবারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেন এম তারেক নূর। কিন্তু বরাদ্দ হওয়া টাকা তুলে নেওয়া হলেও পাওনাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করেননি তিনি। এ কারণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক টাকা বকেয়া পড়েছে। এখন এই টাকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন পাওনাদারেরা।
বর্তমান ছাত্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ‘তারেক নূর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বেশ কিছু কাজের সমন্বয় করেননি। ইতিমধ্যে পাঁচ থেকে ছয়জন পাওনাদার পাওনা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। কিছু মানুষ মৌখিকভাবেও জানিয়েছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ ব্যাপারে সমন্বয় করতে চিঠি দিয়েছেন।’
এম তারেক নূরের দাবি, ‘এগুলো করার পেছনে আসল কারণ আমি যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি বা বলব, সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সংস্কারকাজে সাত থেকে আট কোটি টাকার অনিয়ম, কয়েকটি রেস্তোরাঁ করতেই এক কোটি টাকা খরচ, কৃষি প্রকল্পের দুই কোটি টাকা—এসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি, সে জন্যই এই অপপ্রচার। আমি তো হিসাব দিতে পারব, তারা কি দিতে পারবে?’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি (বিল বাকি রাখা) জানতে পেরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাঁকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। কেননা, সমন্বয় না করলে তার কাঁধেই এটি পড়ে থাকবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’