জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আ.লীগপন্থী শিক্ষকদের তিনটি পক্ষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে আগামীকাল শুক্রবার ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যরা ভোট দিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের তিনটি পক্ষ আলাদাভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে তিনজনের প্যানেল নির্বাচন করা হয়। এই প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকনেতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকেরা পাঁচ বছর ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজ নামে পরিচিত। আরেকটি পক্ষ পরিচিত বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নামে। তবে এবার উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য নূরুল আলমের নেতৃত্বে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
তিন পক্ষের প্রতিটিতে তিনজন করে শিক্ষক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
উপাচার্যের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অজিত কুমার মজুমদার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক। অপর সদস্য হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের নতুন ভবনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খালিদ কুদ্দুস এ ঘোষণা দেন। এই পক্ষে আছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর তপন কুমার সাহা।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজ ঘোষিত দলের নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আমির হোসেন। অন্য দুজন হলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা।
এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক এম এ মতিনের নেতৃত্বে নির্বাচনে তিনজনের একটি দল অংশ নিতে পারে। এম এ মতিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব।
উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের উন্নয়ন এবং সব ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনার জন্য আমরা অংশ নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের উন্নতির স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা নেই বলে মনে করেন আমির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করে ছাত্রবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সহজ সম্পর্কের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরকে মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের একাংশের মনোনীত প্রার্থী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবিক অর্থেই একটি কার্যকর গবেষণাবান্ধব ও ছাত্রদের জন্য কল্যাণমূলক ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। সিনেট সদস্যদের প্রতি আহ্বান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা সমুন্নত রাখার স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য প্যানেলে মনোনীত করুন।’
এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে বলে মনে করছেন উপাচার্য নূরুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চা থমকে আছে। সেটাকে গতিশীল করার জন্যই প্রথমে আমার পদ (উপাচার্য) থেকে নির্বাচন শুরু করা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ছড়িয়ে দেবে।’
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর ১৯ (১) ধারা অনুযায়ী, মনোনীত ও নির্বাচিত ৯৩ জন সদস্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট গঠিত। তবে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে ৮১ জন সিনেট সদস্য ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ।
তাঁরা হলেন, উপাচার্য, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন), কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক প্রতিনিধি ২৯ জন, রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ২৫ জন, আচার্য মনোনীত পাঁচজন শিক্ষাবিদ, সরকার মনোনীত পাঁচজন, জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মনোনীত চারজন গবেষক, একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত সরকারি কলেজের চারজন অধ্যক্ষ এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও উপাচার্য একই ব্যক্তি হওয়ায় একটি পদ এবং শিক্ষক প্রতিনিধি রাশেদা আখতার প্রেষণে কোষাধ্যক্ষ হওয়ায় আরেকটি পদ খালি আছে। দুজন শিক্ষক প্রতিনিধি অবসরে গেছেন, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি বরখাস্ত, একজন অধ্যক্ষ অবসরে ও গবেষকদের একজনের বদলি হয়েছেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ মনোনীত ৫ ছাত্র প্রতিনিধি ৩০ বছর ধরে সিনেটে নেই।