নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস

সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসের সর্ববৃহৎ জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় নাটোরের গুরুদাসপুরের বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়
ছবি: প্রথম আলো

শুধু রাজনীতিতেই সফল ছিলেন না নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস। ছিলেন গণমানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার প্রিয় মানুষ। তাঁর মৃত্যুর পর জানাজার নামাজে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।

সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের মৃত্যুর পর আজ বৃহস্পতিবার তাঁর নির্বাচনী এলাকায় তিনটি জানাজা হয়। এর মধ্যে বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বেলা ১১টায় ও গুরুদাসপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দুপুর সোয়া ১২টায় এবং তাঁর জন্মভূমি গুরুদাসপুরের বিলশা ঈদমাহ মাঠে বেলা ২টায় জানাজা হয়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন কবরস্থানে আবদুল কুদ্দুসের দাফন সম্পন্ন হয়।

ঢাকার ইউনাইটেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার সকালে মারা যান আবদুল কুদ্দুস। ওই দিন দুপুরে সংসদ ভবনে ন্যাম ভবনের মসজিদ–সংলগ্ন জায়গায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর তাঁর মরদেহ গুরুদাসপুরে নিয়ে আসা হয়। সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষ ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

জেলা আওয়ামী লীগে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল কুদ্দুস। গ্রামে স্কুলজীবন শেষে তিনি রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস
ছবি: সংগৃহীত

এদিকে সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে গুরুদাসপুর পৌরশহরে আধাবেলা সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। বন্ধ ছিল নির্বাচনী এলাকার সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন অফিসে ছুটি না থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ও কর্মচাঞ্চল্য ছিল তুলনামূলক কম।

সংসদ সদস্যের জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সামসুল হক টুকু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) এস এম কামাল হোসেন, নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞাসহ দলীয় নেতা–কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুসকে গার্ড অব অনারসহ সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দলের নানা পর্যায় থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় আবদুল কুদ্দুস রাজশাহীতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত রাজশাহী কলেজছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

আবদুল কুদ্দুস ১৯৯১ সালে নাটোর-৪ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মোট সাতবার নৌকার মনোনয়ন পান এবং পাঁচবার নির্বাচিত হন। আবদুল কুদ্দুস মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।