‘নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে’ তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও খেলেন

গোপালগঞ্জের শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সপ্তম তলার শয্যায় মেজ মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছেন বাবা টিটো মোল্লাছবি: প্রথম আলো

‘আমি মারা গেলে আমার বাচ্চারা সবার অযত্ন-অবহেলায় বেঁচে থাকবে। তাদের কষ্টের শেষ থাকবে না। তাই আমার সঙ্গে তাদেরও নিয়ে যেতে চাই।’

গোপালগঞ্জের শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অষ্টম তলার মহিলা ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন পলি বেগম।

পলি বেগমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে নিজেও খেয়েছেন। এর মধ্যে ছোট মেয়ে দেড় বছর বয়সী মীম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। আড়াই বছর বয়সী মেয়ে আমেনা ও আট বছর বয়সী আফসানার চিকিৎসা চলছে।

পলি বেগম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লঙ্কাচর গ্রামের টিটো মোল্লার স্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জের শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তম তলার শিশু ওয়ার্ডের একটি শয্যায় টিটো মোল্লা মেজ মেয়ে আমেনাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন। পাশের শয্যায় আফসানাকে কোলে নিয়ে অক্সিজেন মাস্ক ধরে বসে ছিলেন এক স্বজন।

বিষপানের বিষয়ে পলি বেগমের ভাষ্য, তাঁর স্বামী টিটো মোল্লা বাড়িতে থাকেন না। শাশুড়ি তাঁকে সব সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। পলি বেগমের বাবা নয়টি বিয়ে করেছেন বলে বাবার বাড়িতেও তাঁর কদর নেই। বাবার এতগুলো বিয়ে নিয়ে শাশুড়ি প্রায়ই তাঁকে কটু কথা শোনান। তিনি কারও কাছে কিছু বলতে পারেন না, এসব যন্ত্রণা সইতে পারছিলেন না। গতকাল শাশুড়ি তাঁকে বকাঝকা করতে থাকলে তিনি তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে পরে নিজে বিষপান করেন।

চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে মা ও তিন মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতেই গোপালগঞ্জের শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই ছোট মেয়ে মীমের মৃত্যু হয়।

পলি বেগমের স্বামী টিটো মোল্লা বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। তিন মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী বাড়িতে থাকে। মা প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন বলে সে (স্ত্রী) আমাকে ফোনে বলত। কাল সকালেও মা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন বলে জানিয়েছে। আমি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে দুপুরেই রওনা দিই। পথে জানতে পারি, আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে নিজেও খেয়েছে। ছোট মেয়ে মারা গেল। অন্য দুই মেয়ের কী হয়, আল্লাহই জানেন!’

গোপালগঞ্জের শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাবিকুন নাহার বলেন, নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম না করা পর্যন্ত বলা যাবে না চিকিৎসাধীন তিনজন শঙ্কামুক্ত কি না।