ট্রাক্টরের ধাক্কায় মুহুরি নিহত, প্রতিবাদে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় জেলা জজ আদালতের এক মুহুরি (আইনজীবীর সহকারী) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ট্রাক্টরটিতে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে কালকিনি-ভুরঘাটা সড়কের দক্ষিণ রাজদি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নেছারউদ্দিন হাওলাদার (৩৫) কালকিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মিনাজদি এলাকার কাদের হাওলাদারের ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সকালে নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে আদালতের দিকে যাচ্ছিলেন নেছারউদ্দিন। দক্ষিণ রাজদি এলাকায় এলে পেছন থেকে একটি বালুবাহী ট্রাক্টর মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলটি সড়কে ছিটকে পড়ে ট্রাক্টরের নিচে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নেছারউদ্দিন। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বাধা দেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে কালকিনি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এতে প্রথমে পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এতে পুলিশের ৫ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ১০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে পুলিশ। পরে জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।
কালকিনি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা খোকন জোমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাক্টরে আগুন লাগানোর কথা শুনে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেন এবং ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। এরপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাক্টরটি বেপরোয়া গতিতে এসে মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলের আরোহী সড়কে পড়ে গেলে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক্টর চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এগুলো সড়কে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ জানিয়ে ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও কালকিনি সার্কেল) মো. আলাউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের মুহুরি নিহতের ঘটনায় স্থানীয় জনতা ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ গেলে স্থানীয় লোকজন ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে পুলিশের পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছেন। পরবর্তী সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।