আড়াইহাজারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ১৫

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। শনিবার দুপুরে উপজেলার পাঁচরুখি বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বেলা একটার দিকে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী বাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দলটির ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ বিনা উসকানিতে শটগান ও রাইফেল থেকে গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানালে বিএনপির নেতা–কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে।

সংঘর্ষে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২ জন নেতা–কর্মী ও পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির আটজন নেতা–কর্মীর নাম জানা গেছে।

তাঁরা হলেন সাতগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. নাহিদ মোল্লা, কর্মী মো. ফারুক, বাবু, সোহাগ, ফাহিম, মাসুম, যুবদলের হাবিবুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তানভীর আহমেদ। এ ছাড়া আড়াইহাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূর আলম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৈয়দ আলী ও কনস্টেবল মো. আলমগীর আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিএনপি নেতা–কর্মীদের স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির নেতা–কর্মীরা পদযাত্রার নামে সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন। এ সময় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আমরা তাঁদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। তাঁরা অনুরোধ না শুনে পুলিশের ওপর চড়াও হন। তখন অ্যাকশনে যায় পুলিশ। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা না হলেও পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে।’

সংঘর্ষের সময় পুলিশ রাইফেল দিয়ে গুলি ছোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

শটগান ও রাইফেল থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আজিজুল হক বলেন, শটগান বা রাইফেল থেকে কোনো গুলি ছোড়া হয়নি।

জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান প্রথম আলেকে বলেন, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ অতর্কিত হামলার পর গুলি চালিয়েছে। তাঁরা রাবার বুলেটের পাশাপাশি শটগান ও রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়েছে। তবে কারও গায়ে গুলি লাগেনি। ছাত্রদল নেতা নাহিদ মোল্লাসহ কয়েক জনের শরীরে রাবার বুলেট লেগেছে।

কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরে পাঁচরুখি বাজার থেকে সাতগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি পদযাত্রা শুরু করে। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ–আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফর রহমান আরও বলেন, পদযাত্রাটি শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ এতে হামলা করে। এ সময় তারা নেতা–কর্মীদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে দলের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। পরে তাঁদের স্থানীয় বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

মো. জাহাঙ্গীর আলম নামের পাঁচরুখি বাজার এলাকার একজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মিছিলের সময় সড়কে সামান্য যানজট হয়। তখন পুলিশ এসে নেতা–কর্মীদের সরে যেতে বলে। এতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় পুলিশও গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় আধা ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

‘বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপণ্যসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি’র প্রতিবাদে এবং ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়া ও নেতা–কর্মীদের মুক্তি’সহ ১০ দফা দাবিতে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করছে বিএনপি।