খাসজমি দখল করে মাছ চাষ করছেন ইউপি সদস্য 

নিয়ামতপুর ইউপির সদস্য মোহিত হোসেন সরকারি জমি দখল করে মাছ চাষ  করছেন। ছয় বছর ধরে ওই জমি তাঁর দখলে।

সরকারি এই পুকুর দখল করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মস্তবাপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

এক হিন্দু পরিবারের ২ একর ১৯ শতক জমি থেকে ২০১৮ সালে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে বিক্রি শুরু করেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোহিত হোসেন। এরপর সেখানে পুকুর বানিয়ে মাছের চাষ করছেন। ২০২১ সালে জায়গাটি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়। কিন্তু আজও ওই জনপ্রতিনিধি ওই পুকুরের দখল ছাড়েননি। 

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ইউপি সদস্য মোহিত হোসেন নানা ধরনের কাগজপত্র দিয়ে জায়গাটি নিজ নামে করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করতে ব্যর্থ হয়ে জায়গাটি দখলে রাখতে ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মস্তবাপুর গ্রামের বালির গর্ত নামক স্থানের। যে জায়গাটি একসময় নিতাই পদ সরকারের ছিল, যিনি পরিবারসহ ভারতে চলে গেছেন। 

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিতাই সরকার এই স্থানে ২ একর ১৯ শতক জমি ফেলে রেখে ভারতে চলে যান। সেই থেকে ওই জমিটি নানা সময়ে নানাভাবে ব্যবহার হয়ে এসেছে। এরপর ২০১৮ সালে ওই স্থান থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করেন কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহিত হোসেন। এভাবে বালু তুলে বিক্রির ফলে স্থানটি বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে তিনি পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করছেন। তিনি সবাইকে জানিয়েছেন, জায়গাটি তাঁর, তিনি জায়গার মালিকদের কাছ থেকে ‘পাওয়ার’ পেয়েছেন। 

ওই এলাকার বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুকুরটি যে স্থানে, তার প্রকৃত মালিক ছিলেন নিতাই সরকার। তিনি মারা গেলে দুই ছেলে আনন্দ সরকার ও বাসুদেব সরকার মালিক হন। ২০১১ সালে তাঁরা এই পুকুরসহ পাশের ৭ বিঘা জমি মস্তবাপুর সর্বজনীন পূজা মন্দির কমিটিকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। একটি স্ট্যাম্পে লিখিত দেন এবং শর্ত দেন তাঁরা ফেরত চাইলে পূজা কমিটি ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। এরপর পূজা কমিটি এই জমি দেখাশোনা করত। কিছুদিন যাওয়ার পর ইউপি সদস্য মোহিত হোসেন জায়গাটি দখল করে নেন। তিনি একটি আমমোক্তারনামা দেখান। কমিটির পক্ষ থেকে ঝামেলা করবে না সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই জমি তারা ছেড়ে দিয়েছে। 

তবে ওই জমির বিষয়ে নিয়ামতপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খোকন বিশ্বাস জানান, ৮১ নম্বর মস্তবাপুর মৌজারর ২০৯ ও ২১১ নম্বর খতিয়ানের ৬৫০ ও ৬৫১ দাগে ২ একর ১৯ শতক জমি ছিল মালিকবিহীন। ২০২১ সালে জমিটি সরকারের খাসে নেওয়া হয়েছে। সেই সময়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভুপালী সরকার এটি খাসেও অর্ন্তভুক্ত করেন। জায়গাটি এখন সরকারের। দখলদার মোহিত হোসেনকে জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তাঁরা দ্রুতই এটি সরেজমিনে দখলে যাবেন বলে জানান। 

ইউপি সদস্য মোহিত হোসেন বলেন, পুকুরটিতে তিনি মাছের চাষ করছিলেন। তিনি জমির মূল মালিকের কাছ থেকে ‘পাওয়ার’ (ক্ষমতা) পেয়ে জমিতে যান। কিন্তু সরকার জমিটি খাসে নিয়েছে— এটা জেনে তিনি ইজারা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। বালু বিক্রির বিষয়ে বলেন, পুকুরটি মাছ চাষের উপযোগী করতে খনন করেছিলেন।