বগুড়ায় সাবেক সংসদ সদস্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা বিএনপির

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বুধবার কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহাকরী রির্টানিং কর্মকর্তা মেরিনা আফরোজের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা (কালো জামা গায়ে)।ছবি: প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির উদ্যোগে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুয়েল রানা, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি পলিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ। ছাত্রদল নেতা জুয়েল রানা বলেন, ‘জিয়াউল হক মোল্লাকে নন্দীগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে জিয়াউল হক মোল্লা গতকাল বুধবার কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর পর থেকে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জিয়াউল হক মোল্লার বাবা আজিজুল হক মোল্লা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি মারা গেলে এই আসনে উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে জিয়াউল হক মোল্লা বিএনপির মনোনয়নে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়নে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে এক-এগারোতে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলে সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হন জিয়াউল হক মোল্লাসহ কয়েকজন। সেই থেকে তিনি বিএনপিতে ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিতি পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁকে বাদ দিয়ে মোস্তফা আলীকে দলীয় মনোনয়ন দেয় বিএনপি। একই কারণে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া খসড়া তালিকায় তাঁর নাম ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর বদলে মোশারফ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুস্থ থাকলে এবং মুক্তভাবে রাজনীতি করতে পারলে আমার মতো নেতাদের দলে এতটা অবমূল্যায়ন হতো না। বিএনপি থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম। অথচ বর্তমানে দলের গ্রাম কমিটিতেও আমার নাম রাখা হয়নি। এটা চরম অসম্মান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি চলছে এখন ব্যক্তির একক ইচ্ছায়। এতে দলে স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে। দলে কোনো যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। চামচার দল তৈরি হচ্ছে। ব্যক্তিবিশেষের একক কর্তৃত্বের কারণে দাসত্বের রাজনীতির চর্চা হচ্ছে।’

জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘এক-এগারোর ওই প্রেক্ষাপটে আমাকে সংস্থারপন্থী হিসেবে তকমা দেওয়া হয়। অথচ ওই সময়ে দলের নেতৃত্ব নিয়ে আমি কোনো বক্তব্য দিইনি। যাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে দলে ফিরে এনে পদ দেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য করা হয়েছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থী ট্যাগ লাগিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে রাখা হয়েছে।’

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জিয়াউল হক মোল্লার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে কাহালু উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিয়াউল হক মোল্লা শুধু দলের সঙ্গে নয়, জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তাঁকে কাহালুতে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’