কৃষিপণ্য ছেড়ে ‘মজুত মালের’ ব্যবসা, বাড়ি–গাড়ি সব হয়েছে সংসদ সদস্য রাগেবুলের

বগুড়া–৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান
ছবি: প্রথম আলো

১০ বছর আগে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান ওরফে রিপুর পেশা ছিল কৃষি। করতেন কৃষিপণ্যের ব্যবসা। তাঁর স্ত্রী জোবাইদা আহসান ওরফে জবাও ছিলেন সম্পদহীন। তবে এখন কোটিপতি রাগেবুল। কৃষি পেশা ছেড়ে ধরেছেন মজুত মালের ব্যবসা। হয়েছেন নয়তলা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের মালিক। ৯ মাস আগেও রাগেবুলের কোনো গাড়ি ছিল না। এখন কোটি টাকার এসইউভিতে চড়েন তিনি।

এবারসহ তিনটি নির্বাচনে তাঁর দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। চলতি বছরে ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন রাগেবুল। তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রাগেবুল এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আসনটি জোটের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় রাগেবুল আহসান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন।

আরও পড়ুন

এবারের সংসদ নির্বাচন, উপনির্বাচন ও ২০১৪ সালের মিলিয়ে তিনটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য হওয়ার পর রাগেবুল বছরে ১১ লাখ টাকারও বেশি আয় করেন। ১০ বছর আগে তাঁর নগদ বা ব্যাংকে কোনো সঞ্চয় ছিল না। এখন ব্যাংকে রাগেবুলের সঞ্চয় আছে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার ২৮০ টাকা। হাতে নগদ আছে ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ঘরে স্বর্ণালংকার আছে লাখ টাকার। আছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাব ও ইলেকট্রনিকস পণ্য। মৎস্য খামারে বিনিয়োগ আছে ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মৎস্য খামার আছে ৯ একর।

১০ বছর আগে রাগেবুল আহসানের কোনো বাসা-বাড়ি ছিল না বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। এবারের হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া চার শতক জায়গার ওপর তাঁর নয়তলা বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। বগুড়া শহরের কালীতলা এলাকায় শহরের প্রধান সড়কের পাশে রাগেবুলের মালিকানায় আলিশান এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দাম ২ কোটি ২০ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন। ২০১৪ সালে রাগেবুলের স্ত্রী জোবাইদা আহসানের কোনো সম্পদ ছিল না। এ বছর উপনির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় রাগেবুল স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণালংকার থাকার কথা উল্লেখ করেন। তবে এবার দাখিল করা হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদ উল্লেখ করেননি।

হলফনামা অনুযায়ী, ১০ বছর আগে রাগেবুলের নিজ নামে কোনো জায়গা-জমি ছিল না। এখন কৃষিজমি আছে ১৫ বিঘা। তবে এই জমি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অকৃষি জমি আছে ৮৫ শতক। ৯ মাস আগে তাঁর অকৃষি জমি ছিল ৫৩ শতক। এর বাইরে ৯ দশমিক ৩ একর আয়তনের একটি মৎস্য খামারের মালিকও তিনি। তবে এটিও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বলে এবারের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। ব্যবসা থেকে রাগেবুল বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সংসদ সদস্যের সম্মানী থেকে আয় ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন

১০ বছর আগে রাগেবুলের ব্যাংকে কোনো দায়দেনা ছিল না। গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিবি সমমূলধন সহায়তা কর্মসূচির অধীন তাঁর নিজ নামে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দায় থাকার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। এবারের হলফনামায় ব্যাংকে ৭৪ লাখ টাকা দায় থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। ওই উপনির্বাচনে তিনি যে সম্পদ বিবরণী জমা করেছিলেন, সেখানে তিনি নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং কয়েকটি ব্যাংকে ৩১ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য দিয়েছিলেন। ৯ মাস আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগেও রাগেবুল আহসানের কোনো গাড়ি ছিল না। এখন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ল্যান্ডক্রুজার এসইউভিতে চড়েন তিনি।

সম্পদ বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকে ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা নয়, ৩৮ লাখ টাকা জমা আছে। হলফনামায় টাকার অঙ্ক লিখতে ভুল হয়েছে। বাকি সম্পদের বেশির ভাগই পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। ব্যবসার আয় দিয়ে যা কিছু সম্পদ করেছি, তা হলফনামায় উল্লেখ করেছি।’

আরও পড়ুন