প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাতায়াতের টাকা তোলা নিয়ে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংগর্ষের পর পুলিশের অভিযান। আজ দুপুরে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভাগীয় জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পুঠিয়া উপজেলা থেকে এ জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য টাকা তোলা নিয়ে দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার বানেশ্বর বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এসে দুই পক্ষের চারজনকে আটক করেছে। আহত ব্যক্তির নাম হাবিবুর রহমান (৩৫)। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের খুটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল বারি আজ বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। হাটের ইজারাদারের অভিযোগ, সরকারদলীয় কোনো অনুষ্ঠান হলেই হাটের ইজারাদারের কাছ থেকে খরচ নেওয়া হয়। রাজশাহীতে ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভাগীয় জনসভা আছে। ওই সভা সফল করার জন্য স্থানীয় নেতা–কর্মী জনসভায় নিয়ে যাওয়ার খরচের বিষয় নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বানেশ্বর বণিক সমিতির কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মনসুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ও রাজশাহী জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ওবায়দুর রহমানের জন্য হাট কমিটিকে পৃথক খরচ দিতে বলা হয়।

সভায় সংসদ সদস্য মনসুর রহমানের পক্ষে জেলা যুবলীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সেলিম শেখ এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদের পক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। তবে হাট কমিটি পৃথক তিন জায়গায় খরচ দিতে আপত্তি করে। শেষ পর্যন্ত তারা কাউকেই খরচ দিতে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে স্থানীয় খুটিপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগের সমর্থক হাবিবুর রহমান এই খরচ নেওয়ার বিষয় নিয়ে আবুল কালাম আজাদের কথার প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে হাট কমিটির লোকজন তা মীমাংসা করে দেন। এ ঘটনার জেরে আজ দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তিনি নিজে দুটি তোরণ নির্মাণ করেছেন। এতে তাঁর ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচ তিনি কারও কাছে চাননি। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে জনসভায় যেতে হবে। এ জন্য তিনি ১৪টি ট্রাক ভাড়া করেছেন। জনসভার দিন সকালে তাঁকে ৫ হাজার মানুষের নাশতার খরচ দিতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের জন্য না হলেও হাট কমিটি তো অন্তত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জন্য খরচ দেবে। কিন্তু হাট কমিটি খরচ দিতে চায় না।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘টাকা দিলেও তিনি খুশি, না দিলেও খুশি। কিন্তু হাবিব (হাবিবুর রহমান) ছোট একটা ছেলে, মুখের ওপর দিয়ে কথা বলে। ও বিএনপি করত। মাফ চাওয়ার পরেও গতকাল বাইরে গিয়ে ৩০-৩৫ জন লোক জড়ো করেছিল। আজ দুপুরে আবার দেশীয় অস্ত্রসহ হাবিব খুটিপাড়ার লোকজন নিয়ে বানেশ্বর বাজারে আসে। এ সময় আমার লোকজন প্রতিবাদ করেছে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে।’

জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান (৩২) বলেন, গতকাল রাতে সভায় তিনি পৃথকভাবে খরচ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এ কথা বলার কারণে আবুল কালাম আজাদ তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে হাট কমিটির লোকজনের অনুরোধে আবার তিনি নিজেই আবুল কালাম আজাদের কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছেন। তারপরও আবুল কালাম আজাদের লোকজন তাঁকে মারার জন্য তাঁর বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলেন। আজ সকালে তিনি নেতা–কর্মীদের নিয়ে বানেশ্বর বাজারে গেলে আবুল কালাম আজাদের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় হাবিবুর রহমান (৩৫) নামে তাঁর পক্ষের একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরা বণিক সমিতির কার্যালয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা কোনো পক্ষকেই খরচ দেবেন না। সবাই একসঙ্গে জনসভায় যাবেন। সেখানে হাবিবের সঙ্গে কালামের তর্কবিতর্ক হয়েছিল। তবে সেটা তৎক্ষণাৎ মীমাংসা করে দেওয়া হয়।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তিনি বিষয়টি আংশিক শুনেছেন। তবে তাঁর নাম (আবদুল ওয়াদুদ) বলুক আর সংসদ সদস্যের নাম বলুক, এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বানেশ্বরের খুঁটিপাড়া ও নামাজগ্রাম—এই দুই গ্রামের মধ্যে বিবাদ হতেই থাকে। ব্যবসায়ীরা কোনো পক্ষকেই খরচ দিতে চাননি, তাঁরা ভালো কাজ করেছেন।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মনসুর রহমান বলেন, তাঁর লোকজনকে জনসভায় নেওয়ার জন্য তিনি কাউকে যাতায়াত ভাড়া দিতে বলেননি। এ রকম নির্দেশনা চার বছর আগেও কাউকে দেননি। এখনো দেননি।