বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ২১তম প্রদর্শনী
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও দলিলপত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান।
আয়োজকেরা জানান, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এটি ২১তম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রদর্শনী। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তিন শতাধিক বইয়ের পাশাপাশি দুই শতাধিক মুক্তিযুদ্ধকালীন আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সাইক্লোস্টাইল মেশিন, রেডিও, পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যবহৃত শেল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ডামি রাইফেল, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান ও তৎকালীন সংবাদপত্রসহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রদর্শন করা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধকালে আদেশ-নির্দেশ মুদ্রণের জন্য ব্যবহৃত সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রটি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ২৬ মার্চ বরিশাল শহরের বগুড়া সড়কে বর্তমান সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম স্বাধীন বাংলা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সচিবালয় থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হতো। তৎকালীন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একমাত্র সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রটি ব্যবহার করেই সচিবালয়ের আদেশ-নির্দেশ মুদ্রণ করা হতো।
সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রটি ১৬ বছর ধরে সংরক্ষণ করছে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি। বরিশাল নগরের সদর রোডের বিবির পুকুরের পূর্ব পাড়ে রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত প্রদর্শনীতে যন্ত্রটি রাখা হয়েছে। এটি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন তরুণ-যুবকেরা। অনেকেই যন্ত্রটি স্পর্শ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী আল আমিন জানায়, ‘মুক্তিযুদ্ধের বহু বছর পরে আমাদের জন্ম হলেও এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখার একধরনের আকুতি কাজ করে।’
আয়োজকেরা জানান, একাত্তরে তৎকালীন বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আজিজুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়ে সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রটি স্বাধীন বাংলা সচিবালয়ের কাজে দেন এবং নিজেও এতে যুক্ত হন। পরে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তিনি নিহত হন। স্বাধীনতার পর তাঁকে স্বাধীনতা পদকে সম্মানিত করা হয়। এ সচিবালয় থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম পরিচালিত হতো। সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি পরিচালনা করতেন জেলা প্রশাসনের কর্মচারী সুচিত্র কুমার দাস, যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা সরকারের বিভিন্ন আদেশ মুদ্রণ করা হতো।
সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি ব্যবহার করতেন তৎকালীন জেলা প্রশাসনের কর্মচারী সুচিত্র কুমার দাস। তিনি এক বছর আগে মারা গেছেন। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দক্ষিণাঞ্চলে স্বাধীন বাংলা সরকারের বিভিন্ন আদেশ, মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি দপ্তরে দেওয়ার জন্য সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি ব্যবহৃত হতো।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২১ বছর ধরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও দলিলপত্র প্রদর্শনী করে আসছে। নতুন প্রজন্ম এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে।
প্রদর্শনীতে আসেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জি কবির ভুলু। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এই প্রদর্শনীতে এসে প্রতিটি জিনিস মনোযোগ দিয়ে দেখি। একাত্তরের স্মৃতিতে ফিরে যাই। চোখে পানি চলে আসে। সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পারিনি।’