মুন্সিগঞ্জে ২০০ বাস ও ৬ লঞ্চ ভাড়া আওয়ামী লীগের, বিএনপির নেতা–কর্মীরা আসবেন নিজ উদ্যোগে

মুন্সীগঞ্জ জেলা

মুন্সিগঞ্জ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের তারুণ্যের জয়যাত্রায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই দলের নেতা-কর্মীরা। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রায় ২০০ বাস ও ৬টি লঞ্চ ঠিক করেছে। তবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেকে বাঁচতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গোপনেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গণপরিবহন ও অটোরিকশায় করে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জ থেকে এক দিন আগেই বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতেন মালিকেরা। তবে এবার আজ বুধবার বিকেল চারটা পর্যন্ত বাস ও নৌ চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় এক সপ্তাহ ধরে যুবলীগের সভা হয়েছে। ছয় উপজেলা থেকে দুই হাজার করে নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। এ জন্য তাঁরা বিভিন্ন কোম্পানি এবং মালিক পরিবহনের সঙ্গে চুক্তি করে বাসের ব্যবস্থা করেছেন। যাঁরা যাবেন, তাঁদের জন্য লঞ্চের ব্যবস্থাও করা হবে।

তারুণ্যের জয়যাত্রার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সমাবেশ সফল করতে কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা আছে। মুন্সিগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা থেকে দুই হাজার নেতা-কর্মীকে এ সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এতে ১২ হাজার নয়তো কম করে হলেও ১০ হাজার নেতা-কর্মী থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

আবদুর রহমান আরও বলেন, ঢাকায় যাতায়াতের জন্য প্রতিটি উপজেলার জন্য ৩০টি করে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নৌপথে যেতে ছয়টি লঞ্চ থাকবে।

এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে জেলার নেতারা গোপন বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এক সপ্তাহের তৎপরতায় তাঁদের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা ব্যক্তি উদ্যোগে ঢাকায় যাবেন বলে জানান।

জেলা বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার দাবি, মুন্সিগঞ্জ থেকে অন্তত ২০ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। এরই মধ্যে অর্ধেক লোক ঢাকায় চলে গেছেন। তাঁরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের বাসায় থেকে মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। বাকি ব্যক্তিরা বুধবারের মধ্যে গণপরিবহন অথবা ভেঙে ভেঙে ঢাকায় পৌঁছাবেন।

সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যাওয়া আটকাতে পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা বলেন, মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে অনেকের বাড়িতে গেছে পুলিশ। সমাবেশে গেলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ার দিয়েছে।

জেলা বিএনপির ওই যুগ্ম আহ্বায়ক আরও বলেন, সমাবেশে যাওয়ার সময় সড়কপথে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ছেলেরা ঝামেলা করতে পারে। তাই গোপনেই নেতা-কর্মীরা ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবারের সমাবেশের পর থেকে বিএনপির আর কোনো কর্মসূচিতে পুলিশ-আওয়ামী লীগ বাধা দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না। যেকোনো মূল্যে নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে সভা–সমাবেশ করবেন।

বিএনপির কাউকে কোনোরকম ভয়ভীতি দেখানো হয়নি বলে দাবি করেছেন মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব। তিনি বলেন, ‘যে যেই রাজনৈতিক দলের হোক, তাঁরা তাঁদের রাজনীতি করবেন। এতে কোনো বাধা নেই। তবে রাজনীতি করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

দুই দলের সমাবেশ কেন্দ্র করে ঢাকার পাশের জেলা মুন্সিগঞ্জে বাড়তি কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে সুমন দেব বলেন, বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেয়নি পুলিশ। তবে নিয়মিত মাদক উদ্ধারের টহলের অংশ হিসেবে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কিছু নিরাপত্তাচৌকি রয়েছে। প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন এলাকায় এ রকম নিরাপত্তাচৌকি হতে পারে।