আমরা নিজেদের সম্পদকে ওন করতে একটু কুণ্ঠাবোধ করি: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন বাংলাদেশের প্রকৃতি যে শুধু তাঁকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, তা নয়, এখানকার একদল ভাবুকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। তাঁদের দ্বারা তিনি যে ইন্সপায়ারড হয়েছেন, সে কথা তিনি বলেছেন। বিশেষ করে গগন হরকরা, ফকির লালন শাহর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক গান, কবিতা তাঁর উদ্যোগে ছেপে ছিলেন।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে ‘জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ কথাগুলো বলেন। তিনি ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্থানীয়ভাবে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা করে। এবারের আয়োজন উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’। কুঠিবাড়ি মুক্তমঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
সকাল সোয়া ১০টায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রথমে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর তাঁরা পরপর দুটি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। আলোচনা সভায় উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির প্রাথমিক এক্সপ্রেশন হচ্ছে মিউজিক বা গান। আমাদের দেশে মানুষ যখন আনন্দ পায়, দুঃখ পায় বা যেকোনো কিছু তার অনুভূতি জানাতে চায়, প্রাথমিক টুল অব এক্সপ্রেশন হচ্ছে গান। এই গানগুলো শুধু গান হিসেবে না দেখে কবিতা ও দর্শন হিসেবে দেখতে বলব। এই অঞ্চলে আমাদের দর্শন ও কাব্যের গভীরতা অনেক অর্থে গভীর ছিল, কিন্তু যেকোনো কারণে হোক আমরা সব সময় নিজের সম্পদের ব্যাপারে একটু কুণ্ঠিত থাকি। আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদকে ওন করতে একটু কুণ্ঠাবোধ করি।’
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা রবীন্দ্র, নজরুলজয়ন্তী পালন করছি। কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশের একজন অনেক বড় দার্শনিক, কবি, অনেক বড় গানের মানুষ লালন শুয়ে আছেন। আমি মনে করি, নতুন বাংলাদেশে আমাদের সাংস্কৃতিক হীনম্মন্যতা ও কুণ্ঠা থেকে বের হয়ে এসে লালন, হাসন রাজা তাঁদের মৃত্যুদিবস বা যে উৎসব, তা জাতীয়ভাবে উৎসব করা উচিত। এটা নিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে একধরনের রিসার্চের কাজ চলছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিক। স্মারক বক্তব্য দেন ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনসুর মুসা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান।
অনিবার্য কারণ ও অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা সশরীর উপস্থিত হতে পারেননি দাবি করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গান–কবিতা ও লেখনীতে কোনো কঠিন শব্দ ব্যবহার করেননি। তিনি সহজ শব্দে সবকিছু বুঝিয়েছেন। কিন্তু তাঁর মর্মবাণী অনেক গভীরে। তিনি অসাধারণ ছবি এঁকেছেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রেরণার উৎস।’
দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনা উপভোগ করেন। এরপর চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিন দিনের আয়োজনে পুরো কুঠিবাড়ি সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। কুঠিবাড়ির সামনে বেসরকারি উদ্যোগে বসেছে গ্রামীণ মেলা, যা দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বসে আসছে। মেলা ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন কুঠিবাড়িতে।