রসকো বা রক্তফল খেয়েছেন কখনো, এর স্বাদ কেমন জানেন

রসকো বা রক্তফলের গাছফাইল ছবি

আঙুরের মতো থোকা থোকা ফল। আকারে কিছুটা বড়। টকটকে লাল রঙের। চাকমারা ডাকে রসকো, ত্রিপুরারা বলে তাইথাক, বাঙালিদের কাছে পরিচিত রক্তফল নামে। ইংরেজি নাম ব্লাড ফ্রুট। রং থেকেই যে এমন নাম হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনে পাওয়া যায় ফলটি। বাংলাদেশে এ ফল নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা উদ্যোগ না থাকলেও সম্প্রতি বাজারে এর চাহিদা বেড়েছে।

ফল ব্যবসায়ী সীমান্ত চাকমা বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা করে রক্তফল বিক্রি করেছি। এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে রক্তফল। চিকিৎসকেরা নাকি রোগীদের রক্তফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। সে জন্য এর চাহিদা বাড়ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে রক্তফল মিলছে না। প্রাকৃতিক বন থেকেই এ ফল সংগ্রহ করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বনে প্রাকৃতিকভাবে হওয়া এ ফলটি খেতে টক-মিষ্টি স্বাদের। কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে লাল হয়। পাহাড়ি মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় রক্তফল। তবে এখন চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে ও ঢাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে এ ফলের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। বাণিজ্যিকভাবে ফলটির চাষ করা হলে সারা দেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।

সাবেক কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা বলেন, রক্তফল ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি। তবে সম্প্রতি বাজারে এর চাহিদা বেড়েছে। বনে বড় গাছের মধ্যে লতায় থোকায় থোকায় ধরে এ ফল। প্রাথমিকভাবে রক্তফলে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে বলে তিনি জানান।

রাঙামাটি শহরের বনরূপায় রক্তফল বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। আজ সোমবার সকালে
প্রথম আলো

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের জেনপুল ও ত্রিপুরায় পাওয়া যায় রক্তফল। ভারতের ডাউন টু আর্থ ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্তফল প্রাকৃতিক বনে জন্মে। ক্রমাগত বন ধ্বংসের কারণে ফলটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ২০১৮ সাল থেকে ফলটি রক্ষার জন্য ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে ভারতের সেন্ট্রাল আইল্যান্ড কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইসিএআর গবেষণা কমপ্লেক্স, ত্রিপুরা কৃষি কলেজ ফলটি নিয়ে গবেষণার কাজ করছে। রং তৈরিতেও কাজে লাগানো সম্ভব ফলটি। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গাছে ফল পাওয়া যায়।

পাহাড়ি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাদের কাছে রক্তফলের লতা আছে তাদের থেকে এখন বীজ ও লতা সংগ্রহ করছেন অনেকে। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলে কৃষকেরা জানান। রাঙামাটির বনরুপাসহ বিভিন্ন বাজারে বীজের জন্য এক লতা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রক্তফল শুধু পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে ফলন হয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে হলে আগে গবেষণা প্রয়োজন। এ ছাড়া বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা জরুরি। ফলটি বিভিন্ন খাবারের রং ও শিল্পকারখানায় রং তৈরির কাজেও ব্যবহার করা যায়।