মেহেরপুরে তিন ফসলি জমি থেকে কৌশলে বালু উত্তোলন
উপজেলার টেংরামারী মাঠে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে বালু তোলা হচ্ছে। কৃষিজমি হুমকিতে ফেলে বালু তুললেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
আইনে নিষিদ্ধ হলেও মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের টেংরামারী মাঠে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে আশপাশের কৃষিজমি ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মিজানুর রহমান ও আবদুস সালাম নামের দুই ব্যক্তি দুই বছর ধরে টেংরামারী মাঠের ছয় বিঘা জমিতে দুটি পুকুর খনন করে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তাঁরা বাবর আলী ও ইউনুচ মিয়ার জমি ইজারা নিয়ে তাতে পুকুর কেটেছেন। এভাবে পুকুর খনন করে বালু তোলায় আশপাশের জমিগুলো আস্তে আস্তে খনন করা পুকুরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০–এর ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা–বাগানের ছড়া ও নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘন করেই দীর্ঘদিন ধরে মিজানুর রহমান ও আবদুস সালাম তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার পর তাতে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলছেন।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, আমঝুপি বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। কৃষকেরা কেউ কলা, কেউ পাট বা ধান রোপণ করেছেন। মাঠের মধ্যে দিয়ে একটি সরু পাকা সড়ক চলে গেছে সদরের কোলা গ্রামে। ওই মাঠের মাঝখানে পাশাপাশি দুটি ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর গর্ত করে পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরের মাঝখানে ভাসছে খননযন্ত্র। পাকা সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রলিগুলোতে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি ট্রলি বালু বিক্রি করা হয়।
পুকুরের পাশের জমির মালিক ইছারদ্দি শেখ অভিযোগ করে বলেন, ‘আবদুস সালাম ও মিজানুর রহমান দুজনে মিলে মাটি ও বালুর ব্যবসা করেন। আমার কৃষিজমি আস্তে আস্তে ওই পুকুরে যাচ্ছে। তাঁরা আমার জমি অল্প দামে কিনে নিতে চায়। আমার জমি থেকে বালু উত্তোলন করতে চাচ্ছে।’
পাশের জমির মালিক মালেক উদ্দিন বলেন, একটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, এর চারপাশে ফসলি জমি। যেসব স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেখানে গভীরতাও বেশি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি স্থানে পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। এতে ফসলি জমি আস্তে আস্তে পুকুরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমির ওপর দিয়ে খননযন্ত্রের পাইপ টানা হয়েছে। বালু তোলার কারণে ফসলি জমি ভেঙে পুকুরের আকার বড় হচ্ছে। কৃষকদের কিছুই করার নেই। প্রতিবাদ করতে গেলে ঝামেলা হতে পারে। ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন, টানা দুই বছর ধরে ওই মাঠে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ওই বালু উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। মিজানুর রহমান ও আবদুস সালাম খুব প্রভাবশালী। কেউ কথা বললে তাঁদের সমস্যা হয়। নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
এ সময় মিজানুর রহমান বলেন, ‘জমির মালিক তাঁদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। তাঁরা ইজারা নিয়ে ওইসব জমিতে পুকুর খনন করে বালু তুলছেন। প্রতি গাড়ি বালু ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করছি। আপনি কী চান?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, বছরের শুরুতে ইজারাদার নগদ এক লাখ টাকা করে দেন। বছরের কয়েক মাস বালু তোলা হয়। বাকি সময় মাছ চাষ করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিব হোসেন বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে মেহেরপুরে এসেছি। দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ যদি এমন ঘটনা চলমান থাকে, তবে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’