কোথায় হবে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস

নওগাঁ জেলার মানচিত্র

২০১৮ সালে নওগাঁর এক জনসভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর চার বছর পর ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসরা অনুমোদন প্রদান করে মন্ত্রিসভা। গতকাল মঙ্গলবার সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ’ বিল পাস হয়েছে। বিলটি পাস হওয়ার পর থেকে নওগাঁর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আলোচনা চলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস কোথায় স্থাপিত হবে। নিজ নিজ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরছেন।

গতকাল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল-২০২৩’ পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই–বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে নওগাঁয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের জন্য এখনো কোনো স্থান নির্বাচন করা হয়নি। তবে সম্ভাব্য তিন থেকে চারটি স্থানের যেকোনো একটি স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওগাঁ নওজোয়ান মাঠে নির্বাচনী জনসভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। ওই জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওগাঁ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মালেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে নওগাঁয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওগাঁয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পতিত অথবা এক ফসলি জমি পাওয়া যাবে, এমন স্থান নির্বাচনের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ’ বিল পাস হয়। এখন আইনিপ্রক্রিয়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হবে।

আরও পড়ুন

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান নির্বাচন নিয়ে আলোচনা আছে সর্বত্র। যে কয়েকটি স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের দাবি উঠেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া বাজারসংলগ্ন ছাতড়ার বিল। এ ছাড়া আলোচনায় আছে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা মোড়, নওগাঁর সদর উপজেলার দিঘলীর বিল ও বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারসংলগ্ন বিল।

নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ছাতড়ার বিলের অবস্থান। ওই এলাকার বাসিন্দা ও চন্দননগর কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার একখণ্ড কৃষিজমিও নষ্ট করার পক্ষে নয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য এক ফসলী কিংবা পতিত জমি নির্বাচন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, ছাতড়ার বিলই হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান। কারণ, ছাতড়া বাজারসংলগ্ন ছাতড়া বিলের অধিকাংশ জমিই এক ফসলী। এ ছাড়া নিয়ামতপুর উপজেলার এই অঞ্চল অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হবে। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার গ্রাম হবে শহর—এই অঙ্গীকারও বাস্তবায়িত হবে।

আরও পড়ুন

তবে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা কিংবা নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের ব্যাপারেও অনেকেই সরব হয়েছেন। নওহাটা ও বলিহারে বঙ্গবন্ধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য একাধিকবার মানববন্ধনও করেছেন এলাকাবাসী।

বলিহার কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু নাসের বলেন, নওহাটা মোড় ও বলিহার, এই দুই এলাকা নওগাঁয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সবচেয়ে যৌক্তিক স্থান। কারণ, স্থান দুটি মহাসড়কের পাশে। নওগাঁ শহর থেকে এই দুই স্থানের দূরত্ব ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার। আর সান্তাহার রেলস্টেশন থেকে এই দুই স্থানের দূরত্ব ১৭ থেকে ১৯ কিলোমিটার। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ অংশীজনেরা সবাই সড়ক ও রেলপথ সুবিধা পাবেন। আবার নওগাঁ শহরের সুবিধাও পাওয়া যাবে। এ ছাড়া নওহাটা চৌমাশিয়া বাজারের কাছে প্রায় ৩০০ একর খাসজমি আছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের খরচও অনেক কম হবে।

২০১৩ সাল থেকে নওগাঁয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ‘মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অব নওগাঁ’ নামের একটি সংগঠন।

নওগাঁয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট নওগাঁর প্রধান সমন্বয়কারী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি অবশ্যই একটি যৌক্তিক স্থানে স্থাপন করতে হবে। শহরের খুব কাছাকাছি নয়, আবার শহর থেকে খুব দূরে নয়, এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। আবার জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনের বিষয়ে যাঁরা দায়িত্বে থাকবেন, তাঁরা নওগাঁর সুধীসমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক স্থান নির্বাচন করবেন বলে আশা করছেন তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, নওগাঁবাসীর সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও গবেষণার উপযোগী পরিবেশসহ সার্বিক বিষয় দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন করা হবে।