প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ময়মনসিংহে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সংবাদপত্র হকার্স সমবায় সমিতি। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনেছবি: প্রথম আলো

দেশের শীর্ষ দুটি সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবারও দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। বক্তারা বলেন, এ হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা।

ময়মনসিংহ, খুলনা, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা, বরিশাল, সুনামগঞ্জ ও নওগাঁয় মানববন্ধন করেন সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ ছাড়া এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফেনীর আরও তিনটি সাংবাদিক সংগঠন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমে হামলা মানে কেবল দুটি পত্রিকাকে আঘাত করা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও নাগরিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অবিলম্বে ভিডিও ফুটেজসহ সব প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

ময়মনসিংহ

আজ বেলা একটার দিকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। এতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিগত সময়েও সংবাদমাধ্যমে হামলা হয়েছে। আমরা সরকারকে বলব, এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত এবং যারা ইন্ধন দিয়েছে, সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম আইয়ুম আলী বলেন, ‘অতীতেও সংবাদপত্রে হামলা হয়েছে, সম্পাদকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে, পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই কায়দায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর যে হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে, তা ফ্যাসিবাদী কায়দার বহিঃপ্রকাশ। সংবাদপত্রকে ধ্বংস করা গেলে রাষ্ট্র ধ্বংস করা যাবে, এটি একটি পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস।’

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব, ময়মনসিংহ রিপোর্টার্স ইউনিটি, ময়মনসিংহ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, নিউজ চ্যানেল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং সংবাদপত্র হকার্স সমবায় সমিতি লিমিটেড একই সময়ে একই স্থানে মানববন্ধন করে।

ময়মনসিংহ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শরীফুজ্জামান টিটু বলেন, ‘গণমাধ্যমের শীর্ষ দুটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। রাতে অগ্নিসংযোগের ফলে ভেতরে আটকা পড়ে আমাদের সহকর্মীরা জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছিল, তারা হয়তো মারা যেতে পারত। দীর্ঘক্ষণ ধরে হামলা, লুটপাট হলেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতিহত করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলতে চাই, অনতিবিলম্বে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী সময়েও ভয়ে যেন কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে না পারে।’

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়ের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, ময়মনসিংহ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শরীফুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. মূসা, নিউজ চ্যানেল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক এ এস এম হোসাইন শাহীদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আকন্দ, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সদস্য ও অধিকারের জেলা সমন্বয়ক আবদুল কাইয়ুম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জিহাদুজ্জামান জিসান, সংবাদপত্র হকার্স সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ময়মনসিংহ বুক সেন্টারের ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ প্রমুখ।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, সহিংসতা এবং প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে আগুনের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও সদাজাগ্রত ময়মনসিংহ নামের সংগঠন। বুধবার বিকেল ৩ টায় নগরের গাঙ্গীনারপাড় মোড়ের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে এই কর্মসূচি হয়।

এতে বক্তব্য দেন সুজন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি শিব্বির আহমেদ, সম্পাদক আলী ইউসুফ, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সমন্বয়ক জয়ন্ত কর, সদা জাগ্রত ময়মনসিংহের সভাপতি আবুল কালাম আল আজাদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন, ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন বরকত উল্লাহ প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচী কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সারা দেশে মব চলছে, কিন্তু রাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ওসমান হাদি হত্যা, ভালুকায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে দীপু দাসকে হত্যাসহ মব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে। আজকে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার প্রত্যেকটির দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

খুলনা

বুধবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে ‘খুলনায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, এ হামলা কোনো একক গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়; এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং সামগ্রিকভাবে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত।

বক্তারা বলেন, আজ তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট পত্রিকার পক্ষে দাঁড়াননি; তাঁরা দাঁড়িয়েছেন সত্যের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে। সংবাদপত্রের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা, যার লক্ষ্য স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে দেওয়া।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘কোনো গণমাধ্যমের ওপর আঘাত আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের ওপর হামলা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনার ওপরও আঘাত।’

সাংবাদিকেরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে নিজেদের সুরক্ষার দায়িত্ব অনেকটাই সাংবাদিকদের নিজেদেরই নিতে হচ্ছে। দল-মত ও মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিক পরিচয়কে সামনে রেখে আরও সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

সাংবাদিকদের ভাষ্য, আগে ঘটে যাওয়া গণমাধ্যমে হামলার ঘটনায় যদি ধারাবাহিকভাবে জোরালো প্রতিবাদ গড়ে তোলা যেত, তাহলে হামলাকারীরা নতুন করে কোনো গণমাধ্যমে আঘাত হানার আগে বহুবার ভাবতে বাধ্য হতো।

মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা (এমইউজে) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রানার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি রাশিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ জার্নালিস্ট প্রটেক্ট কমিটির সভাপতি কৌশিক দে, খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা জামাল, নয়া দিগন্তের ব্যুরো প্রধান মো. এরশাদ আলী, সমকালের খুলনা অফিস প্রধান আবুল হাসান হিমালয়, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার কোষাধ্যক্ষ রকিবুল ইসলাম, যমুনা টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান শেখ আল-এহসান, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) সহসভাপতি কাজী শামীম আহমেদ, একুশে টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন খুলনার সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, দীপ্ত টিভির ব্যুরো প্রধান ইয়াসীন আরাফাত, যুগান্তরের খুলনা ব্যুরো প্রধান আহমেদ মুসা, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের খুলনা ব্যুরো প্রধান বেল্লাল হোসেন এবং যমুনা টিভির খুলনা প্রতিনিধি প্রবীর কুমার বিশ্বাস।

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ গণমাধ্যমে হামলা ও গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে খুলনার কর্মরত সাংবাদিকদের মানববন্ধন। আজ বুধবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কালবেলার ব্যুরো প্রধান বশির হোসেন, খুলনা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রানা কবীর, ডিবিসি টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান মো. আমিরুল ইসলাম, এখন টিভির প্রতিবেদক রামীম চৌধুরী, হেলাল আহমেদ মোল্লা, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রতিবেদক অভিজিৎ পাল, চ্যানেল ওয়ানের প্রতিবেদক সোহেল মাহমুদ, আলোকিত বাংলাদেশের খুলনা ব্যুরো প্রধান মো. রাজু আহমেদ, দৈনিক জন্মভূমির সাংবাদিক দেবব্রত রায়, দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম, জন্মভূমির নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল হামিদ, সময় টিভির প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মামুন ও তানজীম আহমেদ, আমার দেশের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. কামরুল ইসলাম, প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল, প্রথম আলোর খুলনার আলোকচিত্রী সাদ্দাম হোসেন, ডেইলি স্টারের খুলনা প্রতিনিধি দীপঙ্কর রায়, ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী হাবিবুর রহমান, এনপিবির ইমরান হোসেন এবং ভয়েস অব টাইগারের উম্মে উমামা রাত্রি প্রমুখ।

এদিন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ; নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা এবং খুলনায় সাংবাদিক ইমদাদুল হক হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট প্রটেক্ট কমিটি (বিজেপিসি)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’ ও ‘আর্টিকেল ১৯’-এর অনুপ্রেরণায় গঠিত বিজেপিসি মনে করে, এসব ঘটনা স্বাধীন মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের ওপর চূড়ান্ত আঘাত। অতীতেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর সংগঠিত সহিংসতা ঘটেছে। সাংবাদিকদের লাঞ্ছনা, হয়রানি ও হত্যার ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা শাস্তির বাইরে থেকে গেছে। অনেক ঘটনায় তাদের শনাক্তও করা হয়নি।

বিজেপিসির দাবি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ঘটনা গণতন্ত্র ও সামাজিক শৃঙ্খলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টিও স্পষ্ট।

বিবৃতিতে সই করেন জার্নালিস্ট প্রটেক্ট কমিটির সভাপতি কৌশিক দে, সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান; সিনিয়র সহসভাপতি মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান, অভিজিৎ পাল ও রকিবুল ইসলাম; যুগ্ম সম্পাদক শিশির রঞ্জন মল্লিক; দপ্তর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, শামীম হোসেন; নির্বাহী সদস্য আবু হেনা মোস্তফা জামাল, হাবিবুর রহমান, মেহেদী মাসুদ খান, মামুন হাছান এবং ভোরের ডাকের এস এম মাহবুবুর রহমানসহ অন্যরা।

এছাড়া সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হুমকি, হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এই উদ্বেগের কথা জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক নূরুল কবিরকে ঘিরে যেভাবে হুমকি ও চাপ সৃষ্টির ঘটনা ঘটছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনায় প্রথম আলো অফিসে হামলার ঘটনাকে দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য ‘চরম অশনিসংকেত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা মনে করেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দেশে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা থেমে নেই। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায় তুলে ধরছে, তখনই একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের ভয় দেখানো ও হামলার মাধ্যমে কণ্ঠ স্তব্ধ করতে তৎপর হচ্ছে।

সংগঠনের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা জামাল, সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ বেল্লাল হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হুমকি ও হামলা শুধু ব্যক্তি সাংবাদিকদের নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। এসব অপচেষ্টা অব্যাহত থাকলে দেশ গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হবে।

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জ জেলা শহরের ভাষাশহীদ রফিক চত্বরে দুপুরে মানববন্ধনের আয়োজন করে টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি (টিআরইউ) জেলা শাখা। টিআরইউ জেলা শাখার সভাপতি বি এম খোরশেদের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানববন্ধনে সঞ্চালনা করেন। এতে বক্তব্য দেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম ছারোয়ার, সাবেক সহসভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, সাংবাদিক সমিতির জেলা শাখার সভাপতি মানবেন্দ্র চক্রবর্তী, স্থানীয় আল-আযান পত্রিকার সম্পাদক আমিনুল হক, ৭১ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। বুধবার দুপুরে জেলা শহরে ভাষাশহীদ রফিক চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি উল্লেখ করে সাংবাদিক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সরাসরি আঘাত। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে লক্ষ্যবস্তু করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে কারা হামলা করেছে, তা স্পষ্ট। এই হামলাকারীদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।

সাংবাদিক নেতা গোলাম ছারোয়ার বলেন, গণমাধ্যমকে ধ্বংস করে কোনো রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না এবং গণতন্ত্র ও অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না। সাংবাদিক নির্যাতন ও গণমাধ্যম আক্রান্ত হলে অতীতে কোনো বিচার হয়নি। ভবিষ্যতে আর যেন কোনো গণমাধ্যম আক্রান্ত ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা যেন না ঘটে সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

পটুয়াখালী

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে আজ বুধবার পটুয়াখালীর দশমিনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন।

দশমিনায় কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজনে আজ দুপুর ১২টার দিকে দশমিনা উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের সামনের সড়কে এক ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে পটুয়াখালীর দশমিনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ। আজ বুধবার দুপুরে দশমিনা উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

দশমিনা প্রেসক্লাবের সভাপতি সমকালের প্রতিনিধি রিপন কর্মকারের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন দশমিনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ফয়েজ আহম্মেদ, প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এ বি এম মিজানুর রহমান, দশমিনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম, দশমিনা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন তানভীর, প্রেসক্লাব দশমিনার সভাপতি মো. বেল্লাল হোসেন, সংবাদের প্রতিনিধি আহাম্মদ ইব্রাহিম, মানবজমিনের প্রতিনিধি শাফায়েত হোসেন, নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি সঞ্জয় ব্যানার্জি, আমার দেশের প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম, মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি মো. হাসান মোল্লা, জনকণ্ঠের প্রতিনিধি আবু ইউসুফ সম্রাট, আজকের সুন্দরবনের প্রতিনিধি মো. মালেক হোসেন, জেলা আইনজীবী মো. আবু তাহের জুয়েল, উপজেলা এনজিও সমন্বয়ক রায়হান বাদল, ব্যবসায়ী বিপ্লব কুমার দেবনাথ প্রমুখ।

গাইবান্ধা

গাইবান্ধা শহরের ডিবি সড়কের গানাসাস মাকের্টের সামনে আজ দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ব্যক্তিবর্গ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষ অংশ নেন। গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা শাখা এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে গানাসাসের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পৌর পার্ক সড়ক, সার্কুলার সড়ক হয়ে রেলগেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গাইবান্ধা শহরে আজ বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। দুপুরে শহরের ডিবি রোডে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) জেলা কমিটির সদস্য কাজী আবু রাহেন শফিউল্লাহর সভাপতিত্বে ও সিপিবি নেতা ছাদেকুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সিপিবি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মিহির ঘোষ, নারী মুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাহেলা সিদ্দিকা, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ওয়ারেছ সরকার, বাসদ জেলা কমিটির সদস্যসচিব সুকুমার মোদক, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের আহ্বায়ক ইশরাত জাহান, যুব ইউনিয়ন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রানু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি কামরুল হাসান বসুনিয়া, রবিদাস ফোরামের জেলা সাধারণ সম্পাদক খিলন রবিদাস প্রমুখ।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাসদ মার্ক্সবাদী জেলা আহ্বায়ক আহসানুল হাবীব, বাসদ জেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুরাদজামান রব্বানী।

বরিশাল

প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি ও দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট। আজ দুপুরে নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে এ কর্মসূচি হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আজ মানববন্ধন হয়
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী বলেন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে আগুন দিয়ে লুটপাট চালানো হয়েছে। শুধু আগুন দেওয়াই হয়নি, দ্য ডেইলি স্টারের ভবনে বহু সাংবাদিককে আটকে রেখে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অথচ এই দুটি গণমাধ্যম অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায় ও নিপীড়নের সংবাদ প্রকাশ করে সরকারের রোষানলে পড়েছিল। এমনকি শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে এই পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছিলেন।

মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আজ প্রশ্ন হলো কারা প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কণ্ঠরোধ করতে চায়? কারা আগুন দেয়, লুটপাট করে? আমাদের ধারণা, যারা আবার ফ্যাসিবাদ ও লুটপাটতন্ত্র কায়েম করতে চায়, তাদেরই কোনো একটি অংশ এই গণমাধ্যমগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে।’ ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয়ে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝে উঠতে পারছি না—ওসমান হাদি হত্যায় কারা জড়িত, আর হামলা হচ্ছে কার ওপর। এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

সুনামগঞ্জ

দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, ছায়ানট এবং শীর্ষ গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। শহরের আলফাত স্কয়ারে আজ বেলা ১১টার দিকে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ হামলা পরিকল্পিত, ঘোষণা দিয়ে হয়েছে। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে নীরব ছিল। তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সরকারের এই ভূমিকা মানুষকে হতাশ করেছে।

উদীচী, ছায়ানট, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন। বুধবার সকালে শহরের আলফাত স্কয়ারে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন প্রবীণ নারীনেত্রী সঞ্চিতা চৌধুরী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল সুমন, জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুদ্দিন, জেলা মহিলা পরিষদের সদস্য তৃণা দে প্রমুখ।

নারী আন্দোলনের নেত্রী সঞ্চিতা চৌধুরী বলেন, এ হামলা মুক্তচিন্তা ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত। সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দোষীরা যেন ছাড় না পায়।

নওগাঁ

বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যাবে। তাঁর বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অপরিহার্য। যারা একে বানচাল করতে চায়, তারা মব সন্ত্রাস করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর অপতৎপরতাকে রুখে দেবে।

ওসমান হাদিসহ সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, ময়মনসিংহে শ্রমিক দীপু দাসকে গণপিটুনির পর পুড়িয়ে হত্যা, সংবাদপত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে নওগাঁয় গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংবাদপত্র অফিসে হামলার প্রতিবাদে নওগাঁয় গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের মানববন্ধন। বুধবার দুপুরে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট, উদীচী, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের পরিকল্পিত হামলা। এরা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর অংশ হিসেবে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের অব্যাহত নিষ্ক্রিয়তার কারণে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এসব করছে। এই গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ ও বিচারের আওতায় আনা না গেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও জননিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়বে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট নওগাঁ জেলার অন্যতম সমন্বয়কারী ও সিপিবি নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি মহসিন রেজা, বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেবেকা সরেন, সিপিবি নওগাঁ জেলা কমিটির সদস্য মোমিনুল হক, বাসদ মহাদেবপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক কালিপদ দাস প্রমুখ।

ফেনী

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফেনীর আরও তিনটি সাংবাদিক সংগঠন। বুধবার সংগঠনগুলোর নিজস্ব প্যাডে সভাপতি ও সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিবৃতি দেয় ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়ন (এফইউজে), দাগনভূঞা প্রেসক্লাব ও ফুলগাজী প্রেসক্লাব।

ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নের (এফইউজে) সভাপতি জহিরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনির আহমদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগ তীব্র ক্ষোভ ও কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দাগনভূঞা প্রেসক্লাব সভাপতি এমাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ইফতেখারুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিকভাবে হেনস্তার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

অপর দিকে দুটি গণমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ফুলগাজী প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন ও সদস্যসচিব রবিউল আজিম চৌধুরী রাহাত। বিবৃতিতে ‎তাঁরা বলেন, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিপন্থী। পত্রিকা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত এবং আইন শৃঙ্খলার অবক্ষয়। এ ধরনের হীন ঘটনা ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

ঠাকুরগাঁও

সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার বিকেল তিনটার দিকে শহরের চৌরাস্তায় ‘ঠাকুরগাঁও নাগরিকবৃন্দের’ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র-শিক্ষক, গণমাধ্যম কর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

ঠাকুরগ৭াও শহরের চৌরাস্তায় ‘ঠাকুরগাঁও নাগরিকবৃন্দের’ বিক্ষোভ সমাবেশ
ছবি: প্রথম আলো

ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ঠাকুরগাঁও শাখার সদস্যসচিব মাহাবুব আলম, শিক্ষক ফজলে ইমাম, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি মজিবর রহমান খান, নাট্যকর্মী এস এম জসিমউদ্দীন, সংস্কৃতিকর্মী মাসুদ আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান, মানবাধিকার কর্মী নূর আফতাব, দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি সোহেল রানা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ফারহান সাদাত যাহেদি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ আশা করেছেন একটি মানবিক, সুশাসন ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাবে। সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে, কিন্তু তা হয়নি। দেশে যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম একটি সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, আজ তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে উপলক্ষে করে তারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা করছে, আগুন দিচ্ছে। সরকার চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বাঙালি সংস্কৃতির অংশ ছায়ানট ও উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। একই সঙ্গে শরিফ ওসমান হাদি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান বক্তারা।

নারায়ণগঞ্জ

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচী কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট। বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

নারায়ণগঞ্জে গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্টের প্রতিবাদ সমাবেশ। আজ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

গণতান্ত্রিক বামজোটের সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মন্টু ঘোষ, সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ জেলা সদস্যসচিব আবু নাঈম খান, বাংলাদেশ জাসদের জেলা সভাপতি সোলেমান দেওয়ান, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহীনসহ অন্যান্য নেতারা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দেশে একটি স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী চক্র নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করে। সরকার ও প্রশাসন নির্লিপ্ত ভূমিকা দেখা যায়। এই সহিংসতায় সরকারের একটি অংশ ও স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি জড়িত বলে ইতিমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে।

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা ও একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রতি সরকারের পক্ষপাতিত্বের কারণেই মৌলবাদীরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে এ সহিংসতা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র।

সমাবেশ থেকে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, হাদিসহ সব রাজনৈতিক হত্যার বিচার, দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের শাস্তি এবং মব সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

লালমনিরহাট

ছায়ানট, উদীচী, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা এবং দীপু দাস ও শিশু আয়েশা আক্তারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। ‎বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের মিশন মোড় গোল চত্বরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) লালমনিরহাটের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

লালমনিরহাটে সিপিবির বিক্ষোভ সমাবেশ
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে সিপিবি লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি ময়জুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন সিপিবির জেলা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন রায়, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নবীন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লালন করতে হবে। এর অন্যথা হলে চলবে না।

সিলেট

এদিকে সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকার কোর্ট পয়েন্টে (শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব চত্বর) গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব। শহীদ ওসমান হাদির খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গণমাধ্যমে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সেখানে বক্তারা বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকেন তাঁদের দায়িত্ব জনসাধারণ এবং জনগণের জানমাল রক্ষা করা। রাজনৈতিক দল কিংবা অন্তবর্তী সরকার যেই হোক তাঁর দায়িত্ব জনগণের জানমাল রক্ষা করা। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বর্তমান সরকার গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে চালানো হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। যারা দেশের মানচিত্র খামচে ধরবে, সে যেই হোক নিজের আপনজন হলেও রুখে দিতে হবে।

সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, বাচিকশিল্পী সালেহ আহমদ, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাবেক সভাপতি নাজমুল কবির, এবি পার্টি সিলেট মহানগর যুব বিষয়ক সভাপতি তানজিল নাফি, সিলেট সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, অনলাইন প্রেসক্লাবের সদস্য কামরুল আলম, নুরুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও ফাহিম আহমদ প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম।

বক্তারা ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান বক্তারা।