ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

ঈদুল ফিতরের দিন গত সোমবার ও ঈদের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে মানুষের ঢল নেমেছিলছবি: প্রথম আলো

কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন হাজার বছরের পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আবার কেউ মুঠোফোনে সেলফি ও গ্রুপ ছবি তুলছেন। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের এমন উপচে পড়া ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে নওগাঁর বদলগাছীতে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হাজারো দর্শনার্থী ছুটে আসছেন ঐতিহাসিক এই স্থানে।

ঈদুল ফিতরের দিন গত সোমবার ও ঈদের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে মানুষের ঢল নেমেছিল। দুই দিনেই বিক্রি হয়েছে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার টিকিট। গতবারের মতো এবারও টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট প্রয়োজন হয় না।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘর কাস্টডিয়ানের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন সোমবার সকাল ১০টা থেকে দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয়। এদিন ১৮ হাজার ৬৭৮ জন দর্শনার্থী প্রবেশ করেন এবং টিকিট বিক্রি হয় ৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৮০ টাকার। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৯৪৮, আর টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ১৭০ টাকার। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের ধারণা, ঈদের ছুটির তৃতীয় দিন আজ বুধবারও দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত হলেও এটি জয়পুরহাট জেলা শহরের কাছাকাছি। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে পাহাড়পুর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। জয়পুরহাট রেলস্টেশন থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার আর নওগাঁ জেলা শহর থেকে এটি ৩২ কিলোমিটার দূরে। এ কারণে অনেকেই সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথে জয়পুরহাট হয়ে পাহাড়পুরে যাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৌদ্ধবিহারের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া যানজট এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ঘুরে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল বিকেলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলে করে এসেছেন। অনেক গাড়িতে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছিল। দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশের জন্য দুটি ফটকের সামনে নারী-পুরুষের আলাদা লাইন করা হয়েছে।

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলেন শাহরিয়ার। গতকাল বিকেল চারটার দিকে পূর্ব গেটে টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঈদের আনন্দকে আরও উপভোগ্য করতে বন্ধুরা মিলে এসেছি। তবে টিকিট কাটার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

দিনাজপুর থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে এসেছেন সাইফুল ও আলমগীর। তাঁরা বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। এবার সুযোগ হওয়ায় দেখতে এলাম। এত বছর আগে নির্মিত বিশাল স্থাপনা দেখে বিস্মিত হয়েছি।’

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান পরিবার নিয়ে এসেছেন বগুড়ার আদমদীঘি থেকে। তিনি বলেন, পরিবারের সবাই পাহাড়পুর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। তাই ঈদের আনন্দ বাড়াতে এখানে আসা।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘প্রতিবারই ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে, তবে এবার সেটি আরও বেড়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরের চার দিনে প্রায় ১৪ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল, এবার দুই দিনেই সেই পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে। আশা করছি, এবার রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে।’