কুমিল্লা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা প্রথম মুখোমুখি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা কায়কোবাদ সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেশের বাইরে। সেই দুর্গে এখন আওয়ামী লীগের দুই নেতার প্রভাব।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পোস্টারে সড়কের অলিগলি ছেয়ে গেছে। গত বুধবার থানা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

গোমতী নদীর দুই পারে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা। এ উপজেলায় অসংখ্য খাল–বিল। বেশির ভাগ এলাকাই নিচু। ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা। জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা এটি। একসময় এই এলাকায় বিএনপির কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের রাজত্ব ছিল।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হত্যা মামলায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কায়কোবাদ সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেশের বাইরে। সেই দুর্গে এখন আওয়ামী লীগের দুই নেতার প্রভাব। দুজনই এবার প্রথমবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুখোমুখি। তাঁদের ঘিরে দলীয় নেতা–কর্মীরা বিভক্ত। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কায়কোবাদের পরিবার ও অনুসারীরা। তবে পুরো এলাকায় নির্বাচনী উত্তাপ নেই। নিরুত্তাপ প্রচারণা। ভোটারদের আগ্রহও কম।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। আগে পাঁচবার নির্বাচন করেছেন জাহাঙ্গীর। প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন। ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন চারবার নির্বাচন করেন। দুবার পরাজিত হন, একবার আওয়ামী লীগ থেকে ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। এবার দুই নেতাই আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এতে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এবার দুই নেতা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রথমবার তাঁরা মুখোমুখি। ইউসুফ নৌকা প্রতীক নিয়ে ও জাহাঙ্গীর ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ইউসুফ ও জাহাঙ্গীর দুজনই কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মুরাদনগরের স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই নেতার বিরোধ চলছে ২৭ বছর ধরে।

হীরার কান্দার অন্তত পাঁচজন ভোটার বলেন, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এবার নৌকা প্রতীকের জয় সহজ হবে না। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর এবার কোমড় বেঁধে নেমেছেন।

গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুরাদনগর উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদর ব্যতীত বেশির ভাগ এলাকায় পোস্টার কম। নৌকা ও ঈগলের পোস্টার কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। বেলা ২টা ৩০ মিনিটে মুরাদনগর থানার সামনে ঈগল প্রতীকের মাইকিং শোনা গেছে। বেলা ১১টায় পান্তি এলাকায় ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন পথসভা করেন। এরপর তিনি ঢাকায় যান। অন্যদিকে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম ইউসুফনগর, নাগেরকান্দি, মটকির চর, আলীর চর, ধনিরামপুর, মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।

জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে তাঁর ছেলে মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, তাঁর মেয়ে জাকের পার্টির প্রার্থী বেনজির আলম অনন, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ কাইয়ুম প্রচারণায় অংশ নেন। ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের পক্ষে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন আল রশিদ মাঠে তত্পর আছেন।