লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কবার্তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ, ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন পর্যটকেরা

সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের বড়দারোগাহাট এলাকার রূপসী ঝরনায় যেতে লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান বা প্রতিবন্ধক নেই। ছবিটি গতকাল শুক্রবার দুপুরে তোলাছবি: কৃষ্ণ চন্দ্র দাস

শুক্রবার দুপুর দেড়টা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের রূপসী ঝরনা থেকে ফিরছিলেন শতাধিক পর্যটক। কেউ ফিরছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে, কেউ হেঁটে। এ সময় ঢাকামুখী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। ট্রেন দেখেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা পায়ে হাঁটা পর্যটকদের ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ওই লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো প্রতিবন্ধক বা গেটম্যান নেই। ফলে ট্রেনের সামনে দিয়েই যানবাহন আর পর্যটক পার হচ্ছিলেন প্রতিযোগিতা করে।

মাত্র তিন সপ্তাহ আগে গত ২৯ জুলাই পার্শ্ববর্তী মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহী নিহত হন। তাঁরাও সবাই পর্যটক ছিলেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, রূপসী ঝরনা এলাকার ওই অংশে রেললাইনের ওপর দিয়ে গাড়ি পার হওয়ার অনুমতি নেই। সেখানে গাড়ি চলাচল না করার জন্য সতর্কতামূলক একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে তারা। তবে পর্যটকেরা এতে সচেতন না হলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রূপসী ঝরনা এলাকার লেভেল ক্রসিংটির দুই পাশে দুটি খুঁটির মাথায় সতর্কবার্তায় লেখা আছে, ‘সাবধান, এই স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ রেললাইনের পশ্চিম পাশে লাগোয়া খালি জায়গায় ছয়টি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। সেগুলো নিয়ে এসেছিলেন পর্যটকেরা। বেলা দেড়টার দিকে যখন মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল, তখনো যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পর্যটকেরা পায়ে হেঁটে ট্রেনের সামনে দিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন।

পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে সহস্রধারা-১, রূপসী ঝরনা, সুপ্তধারা, সহস্রধারা-২, মধুখাইয়া, বাড়বকুণ্ডের অগ্নিকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া বিলাসী ঝরনা, কুমারীকুণ্ড নামে আটটি ঝরনা আছে। বর্ষা এলে এ ঝরনাগুলোতে পর্যটকের আনাগোনা বাড়ে। পর্যটকদের বেশির ভাগই গাড়ি নিয়ে যান ওই এলাকায়। প্রতিটি ঝরনায় যেতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন পার হতে হয়। এর মধ্যে সহস্রধারা-১, ২, সুপ্তধারা ও রূপসী ঝরনায় যেতে হলে পর্যটকদের জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হয়। বন বিভাগ এ ঝরনাগুলো স্থানীয় কিছু লোকজনের কাছে ইজারা দিয়েছে।

পর্যটকেরা জানান, ঝরনায়গুলোতে প্রবেশ ফি ২০ টাকা করে নিলেও সেখানে তাঁদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই নিরাপত্তাও। পর্যটকদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই দিতে হয়। এমনকি লেভেল ক্রসিংয়েও নেই সরকারি কিংবা ঝরনার ইজারাদারের পক্ষ থেকে কোনো নিরাপত্তাপ্রহরী।

ট্রেনের সামনে দিয়ে লেভেল ক্রসিং পার হওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. শাহীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন অনেক দূরে ছিল। তাই তিনি পার হচ্ছিলেন। তবে রেললাইনে যেকোনো মুহূর্তে গাড়ি আটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে মনে করেন তিনি।

গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক ছগীর আহম্মদ বলেন, সরকারিভাবে সেখানে কোনো গেট ও গেটম্যান নেই। কিন্তু ২০ টাকা ফি নিচ্ছে ঝরনার ইজারাদার। তারাও তো গেটম্যান রাখতে পারে। কিন্তু কারও কোনো দায়িত্ব নেই। ফলে আরও মানুষ না মরলে কারও হুঁশ হবে না।

রেলওয়ের সীতাকুণ্ড-মিরসরাইয়ের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী রিটন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, রূপসী ঝরনা এলাকার লেভেল ক্রসিংটি অবৈধ। সেখানে সতর্কবার্তা লাগানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে নতুন রেলগেট ও গেটম্যান নিয়োগ করা হতে পারে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের সেখানে রেলগেট নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাঁর জানামতে ওই গেটে বন বিভাগের নিরাপত্তাপ্রহরী থাকার কথা।