টানা বৃষ্টিতে ডিএনডির নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সঙ্গে যুক্ত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার প্রধান সড়ক সারা বছরই পানিতে তলিয়ে থাকে।

ভারী বর্ষণে ডিএনডি বাঁধের ভেতরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের ভেতর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। এলাকাবাসী বলেন, পানিনিষ্কাশনের খালগুলো ভরাট এবং দখল হয়ে যাওয়ায় এবং ডিএনডি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে ডিএনডি বাঁধের ভেতরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার সড়ক হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সঙ্গে যুক্ত সদর উপজেলার প্রধান সড়ক সারা বছরই পানিতে তলিয়ে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন উপচে ময়লা–আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চলাচলে সবার কষ্ট হয়। মুদি ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম বলেন, খালগুলো ময়লা–আবর্জনায় ভরাট ও অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে ময়লা আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে।

পানিনিষ্কাশনের খাল ময়লা আবর্জনায় ভরাট এবং অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
রিফাত ফেরদৌস, ইউএনও, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা

দক্ষিণ সস্তাপুর ছাড়াও গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সদর উপজেলার পূর্ব ইসদাইর, লালপুর, সেহাচর, তক্কার মাঠ, ফতুল্লা রেলস্টেশন, পিলকুনী, পশ্চিম রামার বাগ, ভুঁইগড়, জালকুড়ি, বৃষ্টি ধারা, গিরিধারাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিলকুনী এলাকার বাসিন্দা মনসুর আহমেদ। তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, পানিনিষ্কাশনের খাল ময়লা আবর্জনায় ভরাট এবং অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। খাল পরিষ্কার ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনডি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও গত পাঁচ বছরেও তা শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানোর পর আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।

ডিএনডি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে একনেকে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিএনডি মেগা প্রকল্পের কাজ পাস হলেও ২০১৭ সালে কাজ শুরু হয়। দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুরো অর্থ ছাড় না হওয়ায় (৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৩০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে) প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প ব্যয় ৫১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ভূমি অধিগ্রহণসহ ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা হয়েছে।

দুটি পাম্প হাউজ স্থাপনসহ প্রকল্পের ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনডি প্রকল্প পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালক ও রক্ষণাবেক্ষণ) রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুনে শেষ করা সম্ভব হবে।