বলা হয়েছিল, আবাসিক হলগুলো হবে অত্যাধুনিক। থাকবে শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চালু হওয়া দুটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুই পেয়েছেন। সাত মাস পেরোলেও চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত পাননি শিক্ষার্থীরা। হালকা বৃষ্টিতেই শিক্ষার্থীদের কক্ষে পানি ঢুকে পড়ে। এখনো হয়নি খাবারের ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদাসীনতায় এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অচিরেই এসবের সমাধান চান শিক্ষার্থীরা।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়টি আবাসিক হলের মধ্যে দুটি হলের নির্মাণকাজ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। এর মধ্যে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নবনির্মিত ফজিলাতুন্নেছা ও শেখ রাসেল হলের চাবি তুলে দেওয়া হয় নিজ নিজ প্রাধ্যক্ষের কাছে।

এরপর ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ২৮ জানুয়ারি তড়িঘড়ি করে ফজিলাতুন্নেছা হল খুলে দিতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ২৯ জানুয়ারি ছাত্রদের শেখ রাসেল হল খুলে দেওয়া হয়। হল দুটির প্রতিটি কক্ষে চারজন শিক্ষার্থীর জন্য পৃথক খাট দেওয়া হলেও দেওয়া হয়নি চেয়ার-টেবিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব সংকটের কারণে পড়াশোনার পর্যাপ্ত পরিবেশ নেই। বারবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

দুটি হলই ১০ তলা। ওঠা–নামা করার জন্য প্রতিটি হলে ছয়টি করে লিফটের ব্যবস্থা করা হলেও চালু করা হয়েছে চারটি করে লিফট। এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চারটি লিফট সচল থাকায় প্রায় সময় লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আবার অনেক সময় এসব লিফটও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের একরকম আতঙ্ক নিয়ে লিফটে চলাচল করতে হয়।

ফজিলাতুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মারজুকা মাহী বলেন, ‘দীর্ঘদিন গণরুমে থাকার পর হলে উঠেছি সাত মাস হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত চেয়ার-টেবিল পেলাম না। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ২৪ ঘণ্টা যানবাহনের শব্দ আসে। বৃষ্টি হলে কক্ষে পানি ঢোকে। ওয়াশরুমগুলোতেও অব্যবস্থাপনার শেষ নেই।’

ফজিলাতুন্নেছা ও শেখ রাসেল হলে এখন পর্যন্ত ডাইনিংয়ের (প্রতি বেলার জন্য ৩০ টাকা মূল্য টোকেন কেটে হল প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া) ব্যবস্থা করতে পারেনি প্রশাসন। তবে ওই দুই হল চালুর দীর্ঘদিন পরে খাবারের জন্য ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্যানটিন চালু করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যানটিনের খাবারের মান তেমন ভালো না। পরিমাণ ও মানের অনুপাতে দামও বেশি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টের প্রথম দিকে শেখ রাসেল হলের ক্যানটিন বন্ধ ঘোষণা করে চলে যান মালিক। এতে শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য অন্য হলের ক্যানটিন বা এক কিলোমিটার দূরে বটতলার খাবারের দোকানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সমস্যাসহ অধিক দামে খাবার খেতে হয়।

শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘নামমাত্র হলে উঠেছি। একটা খাট, তা–ও সাইজ ৬ ফিট। অনেকের পা বের হয়ে যায়। চেয়ার-টেবিল ছাড়া কী পড়াশোনা করা যায়? হলে ক্যানটিন বা ডাইনিং না থাকায় প্রতি বেলায় খাওয়ার জন্য হলের বাইরে যেতে হয়। এতে টাকাও যেমন বেশি খরচ হয়, সঙ্গে অনেক সময়ও অপচয় হয়। প্রশাসন আমাদের সমস্যা আমলেই নিচ্ছে না। মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না এই প্রশাসন। তাহলে করেটা কী?’

শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিকদার বলেন, ‘পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ডাইনিং চালু করা হয়নি। আর লাইন গ্যাস না থাকায় যাঁরা ক্যানটিন চালাতেন, তাঁদের খরচ বেশি হতো। এর কারণে খাবারের দাম বেশি রাখতেন। তাঁদের না পোষানোয় তারা চলে গেছে। লোকবল পেলেই আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব।’

সামান্য বৃষ্টি হলেই নতুন হল দুটির বিভিন্ন কক্ষে পানি ঢুকে যাওয়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দীন বলেন, ভবনের নকশায় (ডিজাইন) ত্রুটির কারণে কক্ষে পানি ঢুকে থাকে। যাঁরা এই ভবনের নকশা করেছেন, তাঁরাই এটি ভালো বলতে পারবেন। পরিকল্পনা পরিচালক হিসেবে তিনি কোনো দায় নিতে চাননি।

নতুন দুটি হলের সমস্যাগুলো নজরে আনা হলে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘প্রকল্প অফিসকে আমি বলে দিয়েছি দ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে। চেয়ার-টেবিল দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ছয় হলের প্রভোস্টদের নিয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে।’