উলিপুরে পানির তোড়ে ভেঙে পড়ল সেতু

কুড়িগ্রামের উলিপুরে গিদারী নদীর তীব্র স্রোতে সেতু ভেঙে পড়েছে। আজ উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের উলিপুরে নদীর তীব্র স্রোতে একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে গিদারী নদীর ওপর ওই সেতুর অবস্থান। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে তীব্র স্রোতে নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুটি ধসে পড়ে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে এই সেতু নির্মিত হয়। এর পর থেকে সেতুটির কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। এই সেতু দিয়ে পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া, আমভদ্রপাড়া, চাকলিরপাড়, জটিয়াপাড়াসহ আশপাশের ৬ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। গত মার্চে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গিদারী নদীর খননকাজ শুরু করে। খনন এখনো চলমান। এতে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি ভেঙে পড়ে।

পাউবোর নদী খনন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুল আজীজ জানান, অর্ধশত বছর আগে ওই সেতু যখন নির্মাণ করা হয়েছিল, সে সময় এটি অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছিল। খাল খননের পর সেতুর মুখ উঁচুতে উঠে যায়। সেতুর উজানে অতিরিক্ত পানি জমায় চাপ সহ্য করতে না পেরে ভাঙন দেখা দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২০০ জিও ব্যাগ ব্যবহার করে পানির স্রোত কমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। আজ ভোরে সেতুটি ভেঙে পড়েছে।

পথচারী চলাচলের জন্য অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।

সকালে সেতু ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মোতালেব ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জমির উদ্দিন।

ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার আগে নির্মাণ করা সেতুটি সংস্কারের অভাবে ধসে পড়ায় পান্ডুল ইউনিয়নের প্রায় ৬ গ্রামের মানুষের চলাচলে অসুবিধা হলো। ভারী বৃষ্টিতে উজানে পানি জমে তীব্র স্রোতের কারণে সেতুর ভাটিতে ও উজানে প্রায় তিন ফিট পানির তফাত হয়। ফলে স্রোতে সেতুর ভাটিতে মাটি সরে গিয়ে আজ ভোররাতে ভেঙে পড়েছে। এর আগে ১১ অক্টোবর সেতুর মাঝের পিলার সম্পূর্ণ ধসে যায়। এ অবস্থায় মানুষ পারাপারের জন্য অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেটি হতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগবে বলে তিনি জানান।

কাগজিপাড়া গ্রামের ইজিবাইকচালক আলী মিয়া বলেন, ‘এই সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ উপজেলা শহরসহ দুর্গাপুর হাট, মিনাবাজার ও পান্ডুল ইউনিয়নে যাতায়াত করতেন। ইউনিয়নের কাগজিপাড়া পানের বরজ থেকে পান নিয়ে জেলা শহরে নিয়ে যেতাম। সেতুটি ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের খুব অসুবিধা হয়ে গেল। ইজিবাইক নিয়ে সহজে শহরে যাব, সে উপায় আর রইল না। এখন ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তীব্র স্রোতে সেতুটির মাঝের পিলার ধসে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সেতুর দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছিল। আজ ভোররাতে সেতুটি ভেঙে যায় বলে শুনেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে সেতুটির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। পথচারী চলাচলের জন্য গিদারী নদীর ওপরে অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকেও বলা হয়েছে।’