পাতা ঝরার দিনে শাখায় শাখায় হাসছে কাঞ্চন
মৌলভীবাজার শহরের মনু নদের পাড়ে যেন একফালি সবুজ অরণ্য তৈরি হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই অরণ্যের দুপাশে আছে হাঁটাপথ। হাঁটাপথের মাঝের অংশজুড়ে আছে ফুলের গাছ।
এখানে দু-একটি গাছে এখন লাল ও হলুদ রঙের রাধাচূড়া, কিছু হলুদ কল্কে ফুল, দু-একটি গাছে কিছু কাঠগোলাপ এবং শরৎ চলে গেলেও কয়েকটি গাছে শিউলি ফুল ফুটছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ গাছেই ফুল নেই। এর মধ্যে আলাদা চেহারা নিয়ে এখন আগন্তুক-পর্যটকদের চোখ ও মন রাঙিয়ে তুলছে দলে দলে ফুটে থাকা কাঞ্চন—কারও কাছে তারা দেবকাঞ্চন নামেও পরিচিত।
একসকালে শান্তিবাগ ওয়াকওয়েতে এই ফুলের সঙ্গে দেখা। গাছের শাখা-প্রশাখাজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটা ফুলের সমারোহ চলছে। এক-দুইটা তো নয়, অনেকগুলো গাছে একসঙ্গে ফুল ফোটায় স্থানটি দেখতে ফুলের রঙে এখন আলাদা, অনেক জাতের গাছের ভিড়েও তারা পৃথক। কোনো গাছের সারা শরীরে ফুলের রক্তিম, গোলাপি-বেগুনি আনন্দ, বেগুনি উচ্ছ্বাস চলছে।
নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ে কাঞ্চন সম্পর্কে তিনটি প্রজাতির কথা বলা হয়েছে—দেবকাঞ্চন, রক্তকাঞ্চন ও শ্বেতকাঞ্চন। ঘন ম্যাজেন্টা রঙের রক্তকাঞ্চন, দুধসাদা শ্বেতকাঞ্চনের ফুল ফুটে একই সময়ে, বসন্তে। বর্ণের পার্থক্য ছাড়া আর সবকিছুতেই তারা অভিন্ন। পাঁচটি পাপড়ির মধ্যে একটির বর্ণবিন্যাস একটু স্বতন্ত্র। লালের ওপর সাদায় কিংবা সাদার ওপর মৃদু গোলাপি রেখায় চিহ্নিত এই বিশেষ পাপড়িটি কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে তুলনীয়।
আর দেবকাঞ্চন ফোটে হেমন্তের শেষে। পাপড়ি সাদা, মৃদু রক্তিম কিংবা ম্লান বেগুনি। গাছ আকারে রক্তকাঞ্চনের চেয়ে লম্বা ও উগ্রগন্ধী। কাঞ্চনের ফল শিমের মতো চ্যাপটা। প্রথমে বাদামি-সবুজ, পরে গাঢ় বাদামি। শুকনো ফল কঠিন। ফল হঠাৎ সশব্দে ফেটে দুভাগ হয়ে যায়, গাছ থেকে বহুদূরে ছিটকে পড়ে। বীজ সহজেই অঙ্কুরিত হয় এবং বৃদ্ধিও খুব দ্রুত হয়ে থাকে। এক বছরের চারাতেও অনেক সময় ফুল ফুটে। ভারতের শুষ্ক অঞ্চলের অরণ্যভূমি হচ্ছে কাঞ্চনের আদিনিবাস।