নিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবারের সামনে এখনো পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও রাসেল মোল্লা (২৭) নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়ার শান্ত কাজী (১৯) ও ফরিদপুরের সালথা থানার ঘটরকান্দা গ্রামের মোহাম্মদ আনিছুর রহমান (৩০)। এর মধ্যে শান্ত কাজীকে গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে নিজ এলাকা থেকে এবং আনিছুর রহমানকে রাত সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের জামতলাহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গত সোমবার রাতে নিহত রাসেল মোল্লার বাবা গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা করেন। মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেন। মামলায় নুরাল পাগলের দরবারে হত্যাসহ অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, লুটপাট, ক্ষতিসাধন ও জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, আজাদ মোল্লার করা মামলায় গতকাল রাতে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে দুটি মামলায় মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আজাদ মোল্লা মামলা দায়েরের পর সোমবার রাতেই মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড় ঠাকুরকান্দি গ্রামের মুফতি আবদুল লতিফ (৩৫) ও গোয়ালন্দ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আলম চৌধুরীপাড়ার অভি মণ্ডল ওরফে রঞ্জুকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়। আবদুল লতিফ গোয়ালন্দ পৌরসভার বাইতুল মোকাদ্দাস জামে মসজিদের ইমাম। গতকাল বিকেলে তাঁদের আদালতে তোলা হলে আবদুল লতিফ হামলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া নুরাল পাগলার দরবারে হামলার দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ৬ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দ থানায় পুলিশের করা মামলায় গতকাল রাত পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি মামলায় এ পর্যন্ত মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজাদ মোল্লার করা মামলা থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে রাসেল মোল্লাসহ ভক্তরা অবস্থান করছিলেন। জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ বাজার আনসার ক্লাবে ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বেলা তিনটার দিকে অতর্কিতভাবে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালানো হয়।

আজাদ মোল্লা বলেন, ঘটনার সময় একপর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ জন দেয়াল টপকে দরবারের ভেতরে ঢুকে প্রধান ফটকের পাশে থাকা তাঁর বড় ছেলে রাসেল মোল্লা, ছোট ছেলে সাজ্জাদ মোল্লা ও ভাতিজি রাহেলা আক্তারকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে, মারধর করে জখম করে। দরবারে থাকা অন্তত ৫০ জন ভক্ত-মুরিদানকে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানেও দ্বিতীয় দফা রাসেলকে মারধর করা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় রাসেলকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

দরবারে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ

মামলার বাদী আজাদ মোল্লার দাবি, অজ্ঞাত আসামিরা নুরাল পাগলার দরবারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মারধর করে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। তাঁদের পরিবার জানায়, দরবার শরিফে ভক্তদের মিলাদ মাহফিলে দেওয়া জমাকৃত ৪০ লক্ষাধিক টাকা, ৫০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার, ৫৫ লাখ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্রসহ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।