কেএমপি কমিশনারকে না সরালে খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ। শনিবার কেএমপির সদর দপ্তরের সামনেছবি: প্রথম আলো

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ না করা হলে আটটি থানা, উত্তর–দক্ষিণের উপকমিশনারের কার্যালয় ও সদর দপ্তর ঘেরাও করে খুলনা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম (বাপ্পি)।

এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাবে আসেন। খবর পেয়ে কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে কর্মসূচিতে থাকা আন্দোলনকারীদের সবাই স্যার ইকবাল রোডে এসে প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক আটকে অবস্থান নেন। পরে প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে রাত পৌনে আটটার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রেস সচিব। রাত আটটা পাঁচ মিনিটে বৈঠক শেষে তিনি প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে যান।

বৈঠক শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাজিদুল ইসলাম (বাপ্পি) বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমাদের আন্দোলন চলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি কেউ কোনো সাড়া দেননি। আমরা এটা প্রেস সচিবকে জানাতে এসেছিলাম। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে যাঁদের খুলনায় বড় বড় জায়গায় বসানো হয়েছে, তাঁদের কি আমাদের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? আমরা এটা জানাতে এসেছিলাম। আমরা প্রেস সচিব মহোদয়কে বলেছি আপনি প্রধান উপদেষ্টাকে অবগত করুন, খুলনার মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। খুলনা আজ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, আওয়ামী লীগার এবং পুলিশ লীগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্কতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তাঁদের শেল্টার দিচ্ছেন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার।’

সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রেস সচিব মহোদয় আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি আগামীকালের মধ্যে এগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন এবং আগামীকালের মধ্যে একটা রেজাল্ট দেবেন। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা আমরা পর্যবেক্ষণে রাখতে চাই। এই সময়ের মধ্যে কেএমপি কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়া না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। ডিসি সাউথ, ডিসি নর্থ, কেএমপির আটটি থানা, কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করা হবে, খুলনা অচল হবে।’

সংবাদ ব্রিফিং শেষে আন্দোলনকারীরা সবাই চলে যান।

এর আগে তৃতীয় দিনের মতো আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে আন্দোলনকারীরা কেএমপির সদর দপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাসকে আটকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে পুলিশ পরে তাঁকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুই দিন কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্তকে ছাড়া হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা সদর থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ আরও দুটি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসআই সুকান্তকে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন