ঘন ঘন লোডশেডিং, ভোগান্তিতে মানুষ 

দিনাজপুরে লোডশেডিং বেড়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। শহরে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও গ্রামে পাঁচ ঘণ্টা হচ্ছে।

দিনাজপুরে এক সপ্তাহ ধরে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। কয়েক দিন ধরে এলাকাভেদে দিনে ও রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার বিদ্যুৎ গেলে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আসছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে ঈদের কেনাকাটা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলার কয়েকটি এলাকার ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় তাঁরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে জানান। তাঁরা আরও জানান, শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। শহর যেখানে দিন–রাত মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হয়, সেখানে গ্রামে পাঁচ–ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।

গতকাল দুপুরে গণেশতলা এলাকায় কথা হয় গৃহিণী আবিদা ফারাহির (৪২) সঙ্গে। তাঁর বাড়ি বিরল উপজেলার বাইশাপাড়া এলাকায়। তাঁদের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল নয়টায় বিদ্যুৎ যায়। এক ঘণ্টা পর এসে আবার বেলা ১১টায় চলে গেছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় আসে। আবার বেলা তিনটায় যায়, আসে বিকেল পাঁচটায়। রাত আটটায় যায়, সাড়ে নয়টায় আসে। কয়েক দিন ধরে এভাবে বিদ্যুৎ আসা–যাওয়া করছে। এতে ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।

যেভাবে রোদের তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে এবার বোরোতে সেচ খরচ বাড়বে। এবার যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া না যায়, তাহলে ভরসা করতে হবে ডিজেলের ওপর। সে ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে কয়েক গুণ।
আবদুল কাউয়ুম, কৃষক, সদর উপজেলা

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে কথা হয় ইয়াছিন আলীর (৫০) সঙ্গে। তাঁর বাড়ি বোচাগঞ্জ উপজেলার ইশানিয়া ইউনিয়নের বকুলতলা একালায়। ইয়াসিন বলেন, বিদ্যুতের অবস্থা ধীরে ধীরে গত বছরের মতো শুরু হয়েছে। গতকাল বুকলতলা স্কুলে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কমপক্ষে চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ যাওয়া–আসা করেছে। মানুষ দীর্ঘক্ষণ এই রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছেন। জানালেন নিজেও রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন।

সদর উপজেলার মালীগ্রাম এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ গেছে সাতবার। ইজিবাইকচালক রবিউল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। রাতেও বিদ্যুৎ গেছে কয়েকবার। ইজিবাইক ঠিকমতো চার্জ দেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি চার্জ না হলে আয়ের পথ বন্ধ।

গুলশান মার্কেটে কাপড় ব্যবসায়ী মিনার হোসেন বলেন, দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ যাওয়া–আসা করে। গরমটাও বাড়ছে। মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়। দোকানেই ঠিকমতো থাকা যায় না।

গতকাল সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। রাতেও বিদ্যুৎ গেছে কয়েকবার। ইজিবাইক ঠিকমতো চার্জ দেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি চার্জ না হলে আয়ের পথ বন্ধ।
রবিউল ইসলাম, ইজিবাইকচালক

কম বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা স্বীকার করেছে খোদ দিনাজপুর নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে দিনাজপুর নেসকো-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, তাঁর এলাকায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট। কয়েক দিন ধরে তিনি সরবরাহ পেয়েছেন ১২ মেগাওয়াট করে। অন্যদিকে নেসকো-২–এর প্রকৌশলী মো. কামাল বলেন, তাঁদের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৪ মেগাওয়াট। গত ২৪ ঘণ্টায় সরবরাহ পেয়েছেন মাত্র ১৪ মেগাওয়াট। ১০ মেগাওয়াট ঘাটতি বিদ্যুৎ এলাকাভেদে বিভিন্ন সময় লোডশেডিং দেওয়া হয়েছে।

লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে আছে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিদ্যুৎ–ঘাটতির বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর একজন উপব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমাদের চাহিদা ৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় পেয়েছি ৭৫ মেগাওয়াট। শুধু সদর উপজেলার মালীগ্রাম এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে হয়েছে সাড়ে আট ঘণ্টা।’ তবে ধীরে ধীরে অবস্থা উন্নতি হতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

বিদ্যুতের এমন অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির মুখে পড়বে বোরোর সেচ। সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকায় কৃষক আবদুল কাইয়ুম বলেন, কয়েক দিন আগে বেশ ভালো বৃষ্টি হয়েছে। মাটি ঠাণ্ডা আছে। পানিতে টান পড়েনি। কিন্তু যেভাবে রোদের তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে এবার বোরোতে সেচ খরচ বাড়বে। এবার যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া না যায়, তাহলে ভরসা করতে হবে ডিজেলের ওপর। সে ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে কয়েক গুণ।