ফিটনেস, নিবন্ধন কিছুই নেই

চাঁদের গাড়ি নামে পরিচিত এই গাড়িগুলো দুর্গম পাহাড়ি সড়কে পর্যটক পরিবহন করে। গতকাল দুপুরে বান্দরবান জেলা শহরের ধনেশ চত্বরেছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি পথে পর্যটকবাহী জিপ গাড়িগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো ফিটনেস সনদ ও হালনাগাদ কাগজপত্র নেই। স্থানীয় লোকজনের কাছে চাঁদের গাড়ি নামে পরিচিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাতিল হয়ে যাওয়া ফোর হুইল জিপ গাড়ি দুর্গম বিপৎসংকুল পাহাড়ি পথে চলছে নিবন্ধন ছাড়াই। গত শনিবার জেলার কেওক্রাডং পাহাড়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটিরও নিবন্ধন ছিল না। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সেরও মেয়াদ ছিল না।

জেলায় দুই ধরনের জিপ পর্যটক পরিবহন করে বলে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। সরকারি সংস্থা থেকে নিলামে কেনা পুরোনো জাপানি জিপগুলোকে বি-সেভেন্টি বলেন চালক-মালিকেরা। এই গাড়িগুলোতে নিলামের লট নম্বর ছাড়া কোনো ধরনের কাগজপত্র থাকে না। নিবন্ধন নেওয়ারও সুযোগ নেই।

বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিক্রি করা ভারতীয় মাহেন্দ্র কোম্পানির জিপও পর্যটন পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এসব জিপ কিনে নিয়ে স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ীরা পাহাড়ি পথে পণ্য ও পর্যটক বহনের কাজে লাগান। তবে মাহেন্দ্র জিপগুলোর ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নেওয়া নিবন্ধন নম্বর থাকে। যদিও সেগুলো হালনাগাদ করা হয় না বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

জেলায় প্রায় ৩৫০টি জিপ গাড়ি রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার পর্যটন স্পটে চলাচল করে বলে জানিয়েছেন পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা। এগুলোর মধ্যে ৩০টি বি-সেভেন্টি ও ৩২০টি মাহেন্দ্র জিপ। জাপানের তৈরি বি-সেভেন্টি গাড়িগুলোতে ফোর হুইল থাকায় দুর্গম পাহাড়ি সড়কে সহজে যাতায়াত করতে পারে। মাহেন্দ্র জিপে ফোর হুইল নেই। সে কারণে উঁচু পাহাড়ি সড়কে এই জিপগুলো চলাচল করতে পারে না।

আরও পড়ুন

সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) বান্দরবান সার্কেলের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থার লটে বিক্রি করা জীবনকাল উত্তীর্ণ জিপ গাড়িগুলোর (বি-সেভেন্টি জিপ) নিবন্ধনের সুযোগ নেই। নিবন্ধনের সুযোগ না থাকায় ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন দেওয়ারও সুযোগ নেই। তবে মাহেন্দ্র জিপগুলো আগের মালিকের নিবন্ধন করা নম্বরে চলে। যদিও বর্তমান মালিকেরা কিনে নেওয়ার পর ফিটনেস সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নবায়ন করেন না।

জিপ-কার মালিক সমিতির সভাপতি নাসিরুল আলম চাঁদের গাড়িগুলোর ফিটনেস সনদসহ কোনো কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বি-সেভেন্টি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি কেওক্রাডং পাহাড়ে ও দুর্গম পাহাড়ি সড়কে চলাচল করতে পারে না। এ জন্য পর্যটনের স্বার্থে কিছুসংখ্যক বি-সেভেন্টি গাড়ি রাখা হয়েছে। মাহেন্দ্র চাঁদের গাড়িগুলোতে নিবন্ধন রয়েছে। কোনো কোনো গাড়ির মালিক হয়তো কাগজপত্র হালনাগাদ করেননি।

জানতে চাইলে বিআরটিএর সহাকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, শুধু বান্দরবানে নয়, কক্সবাজারসহ পর্যটন এলাকাগুলোতে এ ধরনের ছোট যানবাহন পর্যটক পরিবহনে চালু রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এগুলোর ব্যাপারে খুবই সচেতন হওয়ায় বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয় না।

এ ব্যাপারে পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক স্বপন আইচ বলেছেন, এক দিনে সবকিছু করা সম্ভব নয়। গাড়ির ফিটনেস, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও সবকিছু হালনাগাদ শৃঙ্খলায় আনার জন্য মালিক-চালক সবার সঙ্গে সভা হয়েছে।

বান্দরবানের সড়কে দুর্ঘটনার হার খুব কম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, কেওক্রাডং পাহাড়ের দুর্ঘটনাটি দুঃখজনক। গাড়ির ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়গুলো বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন