জীবনে নৈতিকতার গুরুত্ব অনেক। নৈতিকতা হলো সেই মানদণ্ড, যা একজন মানুষকে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে। কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করলেই মানুষ পূর্ণতা পায় না; বরং নীতিনৈতিকতার চর্চাই তাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাই ভালো ফলের পাশাপাশি সবাইকে নৈতিক মানুষ হতে হবে।
শনিবার জামালপুরে শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও বিশিষ্টজনেরা এ কথাগুলো বলেন। জামালপুর শহরের শহীদ সাফওয়ান সদ্য মিলনায়তনে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নানা আয়োজনে মেতেছিল কৃতী শিক্ষার্থীরা।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। জামালপুরের এ আয়োজনে জেলার প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিল।
সকাল সাড়ে আটটা থেকে অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হতে থাকে কৃতী শিক্ষার্থীরা। অনেক দিন পর বন্ধুর দেখা পেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা। একে অপরকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তোলে। নিবন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট, খাবার ও উপহারসামগ্রী। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব। এরপর রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রথম আলো বন্ধুসভার জামালপুরের সদস্য মো. তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর জামালপুর প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যাপক মো. আবদুল হাই আলহাদী ও প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক কাজী আলিম-উজ-জামান বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী বলেন, ‘ভালো ফলাফল করতে হলে চেষ্টা ও পরিশ্রমের বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা ফলাফলে ভালো করলেই হবে না। মানবিক গুণাবলির পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে হবে। আদর্শের জায়গায় দেশপ্রেম থাকতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের সত্যের পথে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক কাজী আলিম-উজ-জামান বলেন, সত্যের পথ সব সময় একটু কঠিন। কিন্তু এই কঠিন পথে চলতে ভীত হলে চলবে না। যারা সাহস নিয়ে চলবে, তারাই বিজয়ী হবে। একজন শিক্ষার্থী যখন বিজয়ী ও সফল হবে, তখনই দেশ হাসবে, জাতির মুক্তি আসবে।
গানে গানে অনুষ্ঠানটি মাতিয়ে তোলেন জামালপুর বন্ধুসভার বন্ধু, স্থানীয় শিল্পী ও কৃতী শিক্ষার্থীরা। প্রথম আলোর থিম সং পরিবেশন করেন তাসকিন মাহমুদের নেতৃত্বে নৃত্যাঙ্গন ও বন্ধুসভার সদস্যরা। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে না বলার শপথ পড়ান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, প্রভাষক মো. মোজাহিদুর রহমান, জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিশাম আল মহান্নাভ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের মধ্যে মোহাম্মদ রিপন বক্তব্য দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সাফল্য ধরে রাখার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কবিতা আবৃত্তি করে নিশাত তাবাসুম ও অনুভূতি প্রকাশ করে শিক্ষার্থী রুকাইয়া জান্নাত। পরে অনলাইন কুইজে অংশ নেওয়া ১০ শিক্ষার্থীকে মঞ্চে ডেকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গান গেয়ে মঞ্চ মাতান তরুণ সংগীতশিল্পী সাদিকুর রহমান ও রাফি তালুকদার।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কৃতী শিক্ষার্থী ইউসুফ মিয়া বলে, ‘অনেক আগ্রহ ছিল অনুষ্ঠানে আসার। আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এত সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়া জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় ছিল কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।