কুষ্টিয়ায় চায়ের দোকানে দুজনকে গুলি, আওয়ামী লীগ নেতাসহ আটক ২

আটকপ্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় একটি চায়ের দোকানে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় তাঁকেসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়া ওই দুই ব্যক্তি হলেন মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ির শিমুলিয়া এলাকার হাসেম গাজী (৫৫) ও বহলবাড়ি সাতবাড়িয়া এলাকার রেজাউল ইসলাম (৫০)।

আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল ইনুর পক্ষে কাজ করেছিলেন। এই আসনে জয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র পার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে শিমুলিয়া গ্রামে স্থানীয় পল্টুর চায়ের দোকানে বসে কয়েকজন চা পান করছিলেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আতাহারের পক্ষের ৩০–৪০ জন অস্ত্র নিয়ে পল্টুর চায়ের দোকানের সামনে যান। সেখানে চায়ের দোকানে থাকা হাসেম গাজীর সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সেখানে অস্ত্র নিয়ে আতাহার ও তাঁর ভাতিজারা হাজির হন। একপর্যায়ে আতাহার তাঁর হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে পরপর পাঁচটি গুলি করেন। এতে সেখানে উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে দৌড় দেন। এতে হাসেম ও ভ্যানচালক রেজাউল গুলিবিদ্ধ হন। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

আহত হাসেম গাজীর ভাতিজা সেন্টু গাজী বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিনের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করি। এতে আতাহার ক্ষুব্ধ হন। বেশ কয়েকবার হামলাও চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আজ আতাহার নিজে অস্ত্র নিয়ে এসে গুলি করেছেন। আমি এর বিচার চাই। আমরা কৃষিকাজ করে সংসার চালাই।’

আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার আলী পুলিশি হেফাজতে থাকায় ওই দুজনকে গুলি করার অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে ফোন করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন, ক্রাইম ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, শিমুলিয়া গ্রামে পূর্ববিরোধের জেরে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অভিযুক্ত আতাহারসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান চলছে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে। পরবর্তী কোনো ঘটনা যাতে না হয়, সে জন্য এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি নিজে হাসপাতালে আছি। আহতদের সব রকম চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শিমুলিয়া এলাকার লোকজনসহ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসেম গাজীর পরিবার আমার পক্ষে নির্বাচন করেছিল। আতাহার আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও জাসদ নেতা ইনুর পক্ষে নির্বাচন করেন। ভোটের মাঠে হেরে যাওয়ার পর আতাহার এলাকার মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’