দিনমজুর-কৃষকের নামে ৫৬ কোটি টাকা ঋণ, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাইসহ ১১৫ জনের বিরুদ্ধে ৮ মামলা
কেউ দিনমজুর, কেউ কৃষক। আবার কেউ সেলুনের কর্মচারী, খেলোয়াড় কিংবা অটোরিকশাচালক। এসব সাধারণ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে তাঁদের ব্যবসায়ী সাজানো হয়। পরে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ঋণের নামে নেওয়া হয় ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা পরবর্তী সময়ে বিদেশে পাচার করা হয়।
এ ঘটনায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দুই ভাই, এক বোনসহ মোট ১১৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আটটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার দুপুরে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে মামলাগুলো করা হয়। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।
সুবেল আহমেদ জানান, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) চট্টগ্রামের চকবাজার, পাহাড়তলী ও ইপিজেড শাখায় আটটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি হিসাব খুলে ঋণের নামে ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক, শীর্ষ কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ মোট ১১৫ জনের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে।
দুদক জানায়, আটটি মামলার প্রতিটিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছোট ভাই ও ইউসিবির সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। সাতটি মামলায় আরেক ভাই আসিফুজ্জামান চৌধুরী, তিনটি মামলায় বোন রোকসানা জামান চৌধুরী এবং সাতটি মামলায় ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউসিবির বিভিন্ন শাখার একাধিক কর্মকর্তাও মামলার আসামি। সব মিলিয়ে আট মামলায় মোট আসামি ১১৫ জন।
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, ইউসিবির চট্টগ্রামের চকবাজার, পোর্ট, পাহাড়তলী ও বহদ্দারহাট শাখায় এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, মুন এন্টারপ্রাইজ, ইসলাম এন্টারপ্রাইজ, সান-সাইন এন্টারপ্রাইজ, আলম এন্টারপ্রাইজ, জুপিটার এন্টারপ্রাইজ, নাজিম অ্যান্ড সন্স ও আল-রাজি এন্টারপ্রাইজ নামে আটটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব খোলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হিসেবে যাঁদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন।
২০০২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দিনমজুর নুরুল ইসলামের নামে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, স্থানীয় খেলোয়াড় দিদারুল আলমের নামে ৪ কোটি, দিনমজুর মইন উদ্দিনের নামে ৭ কোটি, অটোরিকশাচালক আমির হামজার নামে ৮ কোটি, সেলুনের কর্মচারী রাজধন কর্মকারের নামে ৩ কোটি, দিনমজুর নাজিমের নামে ৯ কোটি এবং জসিম উদ্দিনের নামে ৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর কৃষকদের ব্যবসায়ী সাজিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুদক।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তাঁরা বিদেশে পালিয়ে যান। দুদকের দাবি, সাইফুজ্জামানের অন্তত নয়টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়ও তাঁদের একাধিক সম্পদ রয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করে তা বিদেশে পাচার করেছেন সাইফুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।