৪০টি স্থানে নদ-নদীর ভাঙন

২০ দিনে দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেকে জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

নদ-নদীর পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার মুসল্লিপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ৩১টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জোড়াতালি দিয়ে তীর রক্ষার চেষ্টা করলেও তা কাজে আসছে না। গত রোববার সকালে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসল্লিপাড়া, সরকারপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, রসুলপুর ও বথুয়াতলী গ্রামে গিয়ে নদ-নদীর ভাঙনের তাণ্ডব দেখা গেছে।

মুসল্লিপাড়ার বাসিন্দা ফকির চান (৬০) বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার বাড়ি নদীর পোটোত গেইছে। আমার আর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নাই। মানুষের জাগাত ছাপড়া তুলি আছি। কটে যাইম, জানং না। খুব চিন্তাত পড়োছি।

নিজের জাগা নাই। বাধ্য হয়া আবাসনে উঠছি। সেটেও নদ কাছে আসছে
আবদুল জলিল, ভাঙনের শিকার

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, ২০ দিনে দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

দুধকুমার নদের অববাহিকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নে রসুলপুর, প্রথম আলো চর ও মাঝিপাড়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। রসুলপুরে ১৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাশেই একটা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবাসনে।

ভাঙনের শিকার আবদুল জলিল বলেন, ‘নিজের জাগা নাই। বাধ্য হয়া আবাসনে উঠছি। সেটেও নদ কাছে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, এখান ভাঙনের মুখে পড়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের দুটি সোলার প্যানেলের গভীর নলকূপ, একটি স্কুল, পাকা মসজিদ, মাদ্রাসাসহ অর্ধশত বসতভিটা।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, ভাঙনের বিষয় একাধিকবার পাউবোকে জানালেও তহবিলের সংকটের কথা বলে তারা ব্যবস্থা নেয়নি।

পাউবোর একটি সূত্র জানায়, দুধকুমার নদের ভাঙন রোধে সরকার ২০২০ সালে ৬৯২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকার বিপরীতে ৩৮টি প্রকল্প গ্রহণ করে দরপত্র সমাপ্ত করা হয়। বর্তমানে এটি সি তালিকায় যাওয়ায় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে তিস্তা নদীর ভাঙনে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা, দলদলিয়া; রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও চিলমারীতে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কয়েক শ বসতভিটা, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সম্প্রতি কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মতিন ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম পশ্চিম বজরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সংসদ সদস্য ভাঙনকবলিত ৫০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

৬ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের মোগলবাসা, পশ্চিম বজরা, বুড়াবুড়িসহ কয়েকটি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পাউবোর মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রাম ৯টি উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের ২০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। কিছু কিছু জায়গায় বস্তা ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।