কুকুরের তাড়া খেয়ে প্রাণ গেল সোহাগীর, কারামুক্ত বাবাকে আর দেখতে পারল না

১১ বছর বয়সী সোহাগীকে হারিয়ে ঘরের সামনে বিলাপ করছিলেন মা জাকিয়া বেগম। আজ দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌরসভার মৌলভীপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

প্রায় এক মাস কারাবন্দী থাকার পর জামিন পেয়েছেন বাবা। শিগগিরই ফিরবেন বাড়ি। খবরটিতে আত্মহারা হয়ে নানা প্রস্তুতি নেয় ১১ বছর বয়সী সোহাগী। তবে এর আগেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। বাবা জামিনে বেরিয়ে বাসায় গিয়ে পান সন্তানের নিথর দেহ। স্বজনেরা জানিয়েছেন, কুকুরের তাড়া খেয়ে সোহাগী নালায় পড়ে প্রাণ হারায়।

সোহাগী গোপালগঞ্জ পৌরসভার মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আবদুল হামিদ চৌধুরীর মেয়ে। সে গোপালগঞ্জ শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গতকাল বুধবার দুপুরে কুকুরের তাড়া খেয়ে পড়ে অচেতন হয়ে পড়ে সে। পরিবারের লোকজন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গেটপাড়া পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

ছোট্ট মেয়েটির মৃত্যুতে স্তব্ধ পুরো এলাকা। পরিবার, প্রতিবেশী, সহপাঠী, শিক্ষক—কেউই মেনে নিতে পারছেন না এই আকস্মিক চলে যাওয়া। তাঁদের অনেকেই আফসোস করে বলছেন, বাবার কোলে ফেরার আকুলতা নিয়ে চলে গেল সোহাগী।

স্বজন ও সহপাঠীরা জানায়, গতকাল সোহাগীর পরীক্ষা ছিল। তার বাবার বাড়ি ফেরার খবরটি অনেক সহপাঠীকে জানায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সোহাগী ৩০ মিনিট আগেই বাড়িতে ফিরে যায়। দুপুরের খাবার খেয়ে পাশের বাসায় এক সহপাঠীর কাছে যাওয়ার সময় একটি কুকুর তাকে তাড়া দেয়। ভয়ে সোহাগী দৌড় দেয়। একপর্যায়ে বাসার সামনের একটি নালায় পড়ে যায় সে। সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে বাসার ভেতরে গিয়েই সে অচেতন হয়ে পড়ে।

সোহাগী
ছবি: পরিবারের কাছ থেকে সংগৃহীত

আজ দুপুরে সোহাগীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনে মা জাকিয়া বেগম বিলাপ করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেউ কেউ অজান্তেই মুখ চেপে কাঁদছেন। বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। সবার চোখে-মুখে ছড়িয়ে পড়েছে শোক আর বিস্ময়।

কারামুক্ত হয়ে গতকাল রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরেন আবদুল হামিদ। ফিরেই সন্তানকে মৃত অবস্থায় দেখবেন—এ কথা দুঃস্বপ্নেও তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো ভাবতে পারিনি বাড়িতে এসে আমার মায়ের (মেয়ের) মরা মুখ দেখব। ছয় দিন আগেও ফোনে কথা হয়েছিল, মেয়েটা খুব করে জানতে চেয়েছিল, কবে বাড়িতে আসব। আমি বললাম, “মারে আর কয়টা দিন পরে আসব।” মেয়েটা আমার ফেরার অপেক্ষায় ছিল। বাড়ি ফিরে আমার মেয়েটারে বুকে নিতে পারলাম না।’

সোহাগীর ভাই ইমরান চৌধুরী বলেন, গ্রামের জায়গাজমি নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চলছিল। তাঁর বাবা আবদুল হামিদ অসুস্থ থাকায় কয়েকবার আদালতে হাজির হতে পারেননি। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। চলতি মাসের শুরুতে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গতকাল জামিনে মুক্তি পান তিনি।

প্রতিবেশী একজন জানান, এর আগেও এলাকায় একটি ছেলেকে কুকুর কামড়িয়েছে। সোহাগী তো চিরতরে চলে গেল। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত কমাতে ব্যবস্থা না নিলে এমন আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।