এক দিনও আওয়ামী লীগ না করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন নদভী, অভিযোগ মোতালেবের

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. আবদুল মোতালেব। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

জীবনে এক দিনও আওয়ামী লীগ না করে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী দুবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. আবদুল মোতালেব।

আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেবের কাছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নদভী পরাজিত হন। এর পর গত বৃহস্পতিবার নদভী এক সংবাদ সম্মেলন করে মোতালেবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছিলেন। ওই অভিযোগের জবাব দিতে আজ মোতালেব সংবাদ সম্মেলন করেন।

এতে মোতালেবের পাশাপাশি তাঁর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আ ম ম মিনহাজুর রহমান, লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন হিরু প্রমুখ।

নির্বাচনের পর সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ছয়জন খুন হয়েছেন বলে নদভী অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দমন নিপীড়নের অভিযোগ তাঁর।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুল মোতালেব বলেন, জীবনে একদিনও আওয়ামী লীগ না করে দুবার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন নদভী সাহেব। তারপর স্ত্রী, ভাইপো, শ্যালক, ভাগনে, ব্যক্তিগত সহকারীরা সিন্ডিকেট করে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলেন সাতকানিয়া লোহাগাড়াকে। এখন চোরের মায়ের বড় গলা হয়েছে। তিনি নিজেকে ধোয়া তুলসীপাতা ও নিষ্পাপ প্রমাণ করতে চান।

আবদুল মোতালেব আরও বলেন, নদভী ছয় খুনের মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন। এই গল্প অগ্রহণযোগ্য, নিন্দনীয় ও তথ্য প্রমাণহীন। সাতকানিয়া লোহাগাড়া দুই থানার ওসিও এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। সংবাদপত্রে বলেছেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা নেই, ছয় খুনের বিষয়টা কাল্পনিক।’

সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় জামায়াতের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলেও নদভী সেদিন অভিযোগ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে মোতালেব বলেন, ‘আমি যেসব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও চোর-বাটপারদের ইতিমধ্যে দমন করেছি, তাদের পক্ষ নিয়েই জনাব নদভী উক্ত সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে আমার স্থির বিশ্বাস। কারণ, সংবাদ সম্মেলনে তিনি অসংলগ্ন প্রলাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে মোতালেব বলেন, ‘নদভী সাহেব আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে খুনোখুনির আশঙ্কা করছেন। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি ২০-৩০টি খুন হবে বলে প্রচার করেছিলেন প্রকাশ্যে। তিনি উপজেলা নির্বাচনে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করছেন কিনা জানি না, তবে এ বিষয়ে প্রশাসনসহ নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।’

নদভী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন তাঁর নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা এলাকায় যেতে পারছেন না। এ জন্য তিনি নঙ্গরখানা খুলেছেন তাঁর বাড়িতে। এর জবাবে মোতালেব বলেন, ‘নদভীর বাড়িতে যদি এমন কেউ আশ্রিত থাকেন, আমি তাঁদের আমার সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করছি। নদভী সাহেব যেন এ তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। এ আড়াই মাসে নদভী, তাঁর পরিবার বা তাঁর কোনো সামনের সারির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।’

আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে নদভীর দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে বলেও মোতালেব দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার উপজেলা এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানেরা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নদভীকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।