সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতি ও নির্যাতনের অভিযোগ

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে দলের একাংশের নেতা–কর্মীদের সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতি ও দলের নেতাদের নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা এই অভিযোগ করেন। তবে সংসদ সদস্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি জমসেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শামিম, মহিলা সম্পাদক শেখ হাবিবা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সুরঞ্জিত সরকার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আলী, সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আজাহার আলী, ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবজাল হোসেন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিলন, কৃষক লীগের রায়ঘাঁটি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত হালদার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক লীগ নেতা সুরঞ্জিত সরকার অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের নির্দেশে ২০১৫ সালে তাঁকে মেরে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে তিনি আর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। তখন সংসদ সদস্য ও তার ভগ্নিপতি আবদুস সালাম প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে নৌকাকে হারিয়ে দেন। ২০২১ সালে নির্বাচনের সময় তিনি মনোনয়ন চাইলে আয়েন উদ্দিন তাঁকে হিন্দু জাতিধর্ম তুলে কটূক্তি করেন।

সুরঞ্জিত সরকার আরও বলেন, ‘একজন রাজাকারের ছেলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন—এটা পবা মোহনপুরের নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কলঙ্ক।’ তিনি নিজেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দাবি করে আয়েন উদ্দিনকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট চাইতে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

উপজেলা কৃষক লীগের মহিলা সম্পাদক শেখ হাবিবা বলেন, ‘সংসদ সদস্যের কুকর্ম ফাঁস করে দেওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর মোহনপুর উপজেলা চত্বরে প্রকাশ্যে তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। সেই ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ আছে। ওই ফুটেজ দেখলে যে কেউ শিউরে উঠবেন। এরপর সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। শেখ হাবিবা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী আসছেন। তিনি মোহনপুরের মানুষের ওপর সংসদ সদস্যের নির্যাতনের কাহিনি শোনার জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান।

সংবাদ সম্মেলনের খবর শুনে সংসদ সদস্যকে হিন্দুদের কাছে ভোট চাইতে না যাওয়ার আহ্বান জানানোর বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার বলেন, সুরঞ্জিতকে হিন্দুদের ভোটের অভিভাবকত্ব দেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে মোহনপুরের আত্রাই অগ্রণী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. বাবলুর রহমানের লেখা ‘একাত্তরে মোহনপুর’ বইটি নিয়ে আসা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই বইটির একটি পাতায় মোহনপুরের মহিষকুণ্ডি গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকার ৩ নম্বরে হবির মণ্ডলের নাম লেখা আছে। এই হবির মণ্ডল রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বাবা।

সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত সরকার একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ছবিতে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন মোহনপুর উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ইসমাইল আল হাসানি। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। সেই ব্যক্তিকে মাঝখানে নিয়ে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এবং তাঁর ভগ্নিপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম আড্ডায় মেতেছেন। তিনি আরেকটি ছবি দেখিয়ে বলেন, মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাঁটি ইউনিয়নের হাটরা গ্রামের রাস্তা  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি গফুর চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমাদের বাড়ির কাছে অনুষ্ঠান হচ্ছে। অথচ আমাদের ডাকা হয় না।’

আমার বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতির অভিযোগ তুলে লাভ নেই। আমার নেতৃত্বে পবা-মোহনপুরে আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ।
আয়েন উদ্দিন, সংসদ সদস্য, রাজশাহী–৩ আসন

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে রাজাকারপুত্র বা হিন্দুবিদ্বেষী বলে লাভ নেই। আমি দুর্দিনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। ৪৩টি মামলা নিয়ে বের হয়েছি। ১/১১তে জেল খেটেছি। আমার বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতির অভিযোগ তুলে লাভ নেই। আমার নেতৃত্বে পবা-মোহনপুরে আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমি ক্ষমতায় আসার পরে পবা ও মোহনপুরের ১০ ইউনিয়নে নৌকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।’

সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘একটা পক্ষ সব সময় আমার বিরোধিতা করে আসছে। তারা রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য নতুন করে আবার অপপ্রচারে নেমেছে। তাদের কথায় কেউ কান দেবে না। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ যাবে।’ তিনি বলেন, তাঁর ভগ্নিপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ৪০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর সম্পর্কে নতুন করে আর কিছু বলার নেই।’