শরীয়তপুরে ধানে চিটা, ফলন কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষক

বোরো ধান কাটা হচ্ছে। মঙ্গলবার শরীয়তপুরের সদর উপজেলার আটং গ্রামে
ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুর সদর উপজেলার আটং এলাকার কৃষক মোস্তফা সরদার ১৬০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। ওই জমিতে ধান উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ৯০ থেকে ১০০ মণ। তবে দাবদাহের কারণে ধানগাছ ও ধানের ফুল শুকিয়ে যায়, এতে অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। চিটা বাদ দিয়ে মোস্তফা সরদার ২৫ মণ ধান পেয়েছেন। এত অল্প ধান পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।

মোস্তফা সরদার প্রথম আলোকে বলেন, জমিতে বোরো ধান আবাদ করার জন্য ৪৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। পরিবারের সব সদস্য মিলে চার মাস পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে। তাঁর জমি থেকে উৎপাদিত ধানেই সারা বছরের খরচের জোগান হতো। এখন কী করবেন, বুঝতে পারছেন না তিনি।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর শরীয়তপুর জেলায় ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। মে মাসের শুরুর দিকে শরীয়তপুরে ধান কাটা শুরু করেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ ধান কেটেছেন তাঁরা।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। তাঁর এ জমির ধানের বেশির ভাগ চিটা হয়ে গেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এক বিঘা জমিতে অন্তত ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা। কিন্তু ধান পেয়েছেন মাত্র ৮ মণ। এ ধানে কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরে জানুয়ারি মাসজুড়ে কৃষকেরা খেতে বোরো ধান লাগান। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ধানগাছে ফুল আসে। এ বছর এপ্রিল মাসজুড়ে দাবদাহ ছিল। ফলে ধানের ফুল শুকিয়ে অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। জমি থেকে কৃষকেরা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছেন। বাকি ধান চিটা হয়ে গেছে।

আমার জমিতে ১০০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধান পেয়েছি ৫০ মণ। আমার চার মাসের পরিশ্রম বৃথা গেছে। সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা লোকসান।
হোসেন ব্যাপারী, কৃষক, আটং গ্রাম, শরীয়তপুর সদর উপজেলা
জমিতে বোরো ধান কাটছেন তাঁরা। মঙ্গলবার শরীয়তপুরের সদর উপজেলার আটং গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কী পরিমাণ জমির ধানে চিটা হয়েছে, সেটার তথ্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে নেই। তবে শরীয়তপুর সদর উপজেলা, ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ২০ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আবাদ করা ধানে চিটা হওয়ার বিষয়টি জানা যায়।

তবে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর দাবদাহ দেখা দেওয়ায় কিছু স্থানে কৃষকের ধানের সামান্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। ধান কাটার আগের আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকায় অনেক কৃষক সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছেন। এ ছাড়া এ বছর বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন দুটি বেড়েছে। জেলায় কিছু কৃষকের ধানে চিটা দেখা দেওয়ার তথ্য তাঁরা সংগ্রহ করছেন।

সদর উপজেলার উত্তর আটং গ্রামের কৃষক হোসেন ব্যাপারী ১৬০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। তাঁর প্রতি শতাংশ জমিতে ধানের আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৪৫০ টাকা। তাঁর জমির ধান ৫০ শতাংশ চিটা হয়ে গেছে। হোসেন ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জমিতে ১০০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধান পেয়েছি ৫০ মণ। আমার চার মাসের পরিশ্রম বৃথা গেছে। সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা লোকসান।’