শিশুকে অপহরণের পর হত্যা, দুজনকে আটক করে ফেরার পথে পুলিশের ওপর হামলা

অপহরণের পর হত্যার শিকার শিশু মাহিয়া
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের মহেশখালীতে অপহরণের পর মাহিয়া নামের সাত বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে এক দম্পতিকে আটক করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে ওই দম্পতিকে আটক করে থানায় নেওয়ার পথে তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গাড়িচালক আহত হয়েছেন।

পুলিশ হামলার ঘটনায় উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীকে আটক করেছে।

এর আগে আজ দুপুরে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া লবণ মাঠের জন্য খনন করা নালা থেকে শিশুটির বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর বিকেল চারটার দিকে লাশটি পেকুয়া থানায় নেওয়া হয়। এরপর পরনের কাপড়ের সূত্র ধরে শিশুটির লাশ শনাক্ত করেন তার বাবা আয়াত উল্লাহ। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আটক দম্পতি হলেন মোহাম্মদ সুলাইমান (২৬) ও তাঁর স্ত্রী শাহেদা আক্তার (১৯)। তাঁরা কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুল এলাকার বাসিন্দা। ওই দম্পতি মহেশখালীতে বাসা ভাড়া নিয়ে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরি করছিলেন।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন পুলিশ সদস্য তারেকুর রহমান (২৩) ও মোহাম্মদ সাহিনুর রহমান (২১) এবং পুলিশের গাড়িচালক মোহাম্মদ এহেসান (২৫)। আহত ওই তিনজনকে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের বেসরকারি একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আটক দম্পতিকে নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের দলটিতে অবরুদ্ধ করেন ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে লোকজন।

মহেশখালী থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মাহিয়া দক্ষিণ সাইরার ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে বেলা ২টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে মাহিয়ার বাবা আয়াত উল্লাহর মুঠোফোনে কল করেন এক ব্যক্তি। তিনি মাহিয়াকে জীবিত ফেরত পেতে চাইলে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এর পর থেকে মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিন রাতে মহেশখালী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি (জিডি) করেন আয়াত উল্লাহ।

পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে শিশু মাহিয়া অপহরণের শিকার হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শিশুটির বাবা মহেশখালী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এরপর মুঠোফোনের কলের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় অভিযানে নামে মহেশখালী থানা-পুলিশ।

এদিকে মুক্তিপণের জন্য করা মুঠোফোনের কল লিস্ট ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় আসামি ধরার জন্য মাঠে নামে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ। পরে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মাতারবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান মাহমুদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মাতারবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইরার ডেইল এলাকায় অভিযান চালায়। একপর্যায়ে আয়াত উল্লাহর বড় ভাই মোহাম্মদ বশিরের ভাড়া করা বাসা থেকে মোহাম্মদ সুলাইমান ও তাঁর স্ত্রী শাহেদা আক্তারকে আটক করে তারা।

এ সময় আটক দম্পতিকে নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের দলটিতে অবরুদ্ধ করেন ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশের ওই দলটিকে উদ্ধারের জন্য অভিযানে অংশ নেন পার্শ্ববর্তী মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়োজিত পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে আটক দম্পতিকে নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ সময় পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। ইটপাটকেলের আঘাতে দুই পুলিশ সদস্য ও গাড়িচালক আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীকে আটক করে।

মহেশখালী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিশু মাহিয়াকে অপহরণের পর হত্যার সঙ্গে ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ সুলাইমান ও তাঁর স্ত্রী শাহেদা আক্তার জড়িত। কী কারণে ওই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে, তা বের করার জন্য তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে ওই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা হবে বলে তিনি জানান।