‘ভাতই খাইতাম পারি না, ঘর ঠিক করমু কিলা’

পানি নেমে যাওয়ার পর তিন সন্তানকে নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে উঠেছেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাছিরপুর গ্রামের বাসিন্দা নূরজাহান বেগম
ছবি: প্রথম আলো

ঝড়ে টিন-বাঁশের তৈরি বসতঘরের টিনের চালা উড়ে যায়। ভেঙে পড়ে ঘরের বেড়া। এর পরপরই দেখা দেয় বন্যা। ঘরে পানি উঠে যায়। নূরজাহান বেগম (৬০) তিন সন্তানকে নিয়ে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। পানি কমার পর বাড়িতে ফেরেন। ভাঙাচোরা ঘরের পাশে খুপরিঘর তৈরি করে তাঁরা এখন বসবাস করছেন। নুরজাহানের বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর গ্রামে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভ্যাপসা গরমে খুপরিঘরে একটি খাটে বসে কাঁথা সেলাই করছেন নূরজাহান। ঘরের মেঝেতে এখনো কাদা জমে আছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের বাঁশের খুঁটিগুলো হেলে পড়েছে। বেড়া ভেঙে পড়ে আছে।

নূরজাহান বললেন, তাঁর স্বামী নূর ইসলাম সাত-আট বছর আগে মারা গেছেন। তিন শতকের বসতভিটা ছাড়া তাঁদের আর কোনো জমি নেই। তাঁদের চার মেয়ে আর দুই ছেলে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে জসিম উদ্দিন (১৭) একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয়কর্মী। ছোট ছেলে রুবেল (১৫) রাজমিস্ত্রির কাজ শিখছে।

নূরজাহান বলেন, ‘মাস দিন আগে বড় তুফান আইল। চাল উড়াইয়া নিল গিয়া। আমরা ঘরের ভেতরেই আছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছে। তুফানর পরে দুই ছেলেরে লইয়া কোনোমতে থাকার ব্যবস্থা করলাম। ভাঙা বেড়া দিয়া ঘরর চালা দিলাম। এর পরে আইল পানি। এমন পানি এই জীবনে আর দেখছি না। ঘরো হাঁটুপানি হই গেল। আর থাকতে পারলাম না। ঘর ছাড়লাম। উঠলাম আরেক বাড়িতে গিয়া।’

প্রায় ২০ দিন পর নূরজাহান বাড়িতে ফিরে বন্যার ক্ষত দেখতে পান। নূরজাহানের ভাষায়, ‘বন্যার পরে বাড়িতে আইয়া দেখি, ঘরদোরর অবস্থা নাই। ঘরর খুঁটি-বেড়া পানিতে পচি গেছে।’

নূরজাহানের বড় ছেলে জসিমের রোজগারেই টেনেটুনে তাঁদের সংসার চলে। জসিম মাসে চার হাজার টাকা বেতন পান। নূরজাহান বলেন, ‘এই রোজগারে কী চাইরজন মানুষের পেট চলে! বাজারে জিনিসের দাম তো দিন দিন বাড়ছেই। ভাতই খাইতে পারি না, ঘর ঠিক করমু কিলা। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে ঘরটা ঠিক করতাম।’

উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মনসুর আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে এখনো সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ মিলেনি। বরাদ্দ পেলে নূরজাহান বেগমকে ঘর নির্মাণে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।