ডিজিটাল যুগে হাতে লেখা টিকিট

হাতেলেখা ও ছাপা টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা এখনো চালু আছে এই স্টেশনে। নেই অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা।

নীলফামারী রেলস্টেশন থেকে বিক্রি করা ছাপা ও হাতে লেখা টিকিট। গতকাল দুপুরে
প্রথম আলো

দেশের বেশির ভাগ রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকলেও নীলফামারী রেলস্টেশন থেকে এই সুবিধা নেই। এই স্টেশন থেকে পুরোনো পদ্ধতিতে হাতে লেখা ও ছাপা টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা এখনো চালু আছে। এ কারণে একই আসন দুইবার বিক্রিসহ নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে নীলফামারী রেলস্টেশন থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা চালু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা। হাতে লেখা টিকিট নিতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এরপরও অনেকে প্রয়োজনীয় টিকিট নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আবার অনেক সময় আসন খালি যাচ্ছে। এতে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

নীলফামারী রেলস্টেশন মাস্টার ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘হাতে লেখা টিকিট বিক্রি হওয়ায় অনেক সময় মিসিং হয়। আবার কখনো একই টিকিট দুইবার বিক্রি হয়। কালোবাজারিরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে, এতে ট্রেনের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন।’

হাতে লেখা টিকিট বিক্রি হওয়ায় অনেক সময় মিসিং হয়। আবার কখনো একই টিকিট দুইবার বিক্রি হয়।
ওবাইদুল ইসলাম, রেলস্টেশন মাস্টার

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চিলাহাটি থেকে নীলফামারী স্টেশন হয়ে রাজশাহীর পথে তিতুমীর, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, খুলনার পথে সীমান্ত, রূপসা এক্সপ্রেস ও খুলনা মেইল এবং ঢাকার পথে নীলসাগর এক্সপ্রেস এবং ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা নিয়মিত চলাচল করছে। মিতালী এক্সপ্রেসের টিকিট এখানে বিক্রি শুরু না হলেও বাকি সব ট্রেনের টিকিট প্রতিনিয়ত বিক্রি হচ্ছে। চিলাহাটি ও সৈয়দপুর স্টেশন থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা থাকলেও নীলফামারী স্টেশন থেকে সেই সুবিধা নেই। ব্রিটিশ আমলের মতো হাতে লেখা টিকিট বিক্রি এখনো চালু আছে নীলফামারী স্টেশনে।

নীলফামারী জেলা শহরের বড় প্রগতিপাড়া মহল্লার রাখাল রায় বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমাদের ঢাকা, খুলনা, যশোর, রাজশাহী যেতে হয়। অনলাইন ব্যবস্থা না থাকায় স্টেশনে এসে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। কোনো কোনো সময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কখনো লাইন ঠেলে টিকিট কাউন্টারে পৌঁছার আগেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে কালোবাজারিদের কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কিনতে হয়। এসব কারণে নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

জলঢাকা উপজেলা থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নীলসাগর ট্রেনের টিকিট নিতে স্টেশনে এসেছিলেন ফাহিম হোসেন (২২)। তিনি বলেন, ‘কাউন্টারের অনেক বড় লাইন। খাতা দেখে হাতে লেখা টিকিট নিতে অনেক সময় লাগল। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর একটি টিকিট নিতে পেরেছি। ডিজিটাল যুগে আমরা এমন সেবা আশা করতে পারি না। অনলাইন ব্যবস্থা চালু থাকলে বাড়িতে বসে টিকিট সংগ্রহ করতে পারতাম।’

নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক, জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে জেলা শহরের অতি পুরোনো একটি স্টেশনে আদিকালের টিকিটিং ব্যবস্থা চালু থাকাটা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁরা চান নীলফামারী রেলস্টেশনে দ্রুত অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করা হোক।

খাতা দেখে হাতে লেখা টিকিট নিতে অনেক সময় লাগল। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর একটি টিকিট নিতে পেরেছি।
ফাহিম হোসেন, ট্রেনের তরুণ যাত্রী

সমিতির বর্তমান সভাপতি এস এম সফিকুল আলম বলেন, এই জেলা থেকে রাজশাহী, খুলনা, ঢাকাসহ ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত আন্তর্দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু আছে। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্টেশনটির সেবার মানের কোনো উন্নতি হয়নি। তাঁরা দ্রুত অনলাইন টিকিটিং সেবা চালুর দাবি জানাচ্ছেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘যেসব স্টেশনে অনলাইনে সিস্টেম চালু নেই, সেসব স্টেশনে আমরা অনলাইন ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, দ্রুতই নীলফামারী স্টেশনে টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কম্পিউটার সিস্টেম চালু করা সম্ভব হবে।’