ভাঙন রোধে হচ্ছে বাঁধ, স্বস্তি 

কুষ্টিয়ার মিরপুরে বাঁধ না থাকায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষের ঘর ও জমি জমিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙন। গত বৃহস্পতিবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

প্রমত্ত পদ্মা নদীর ভাঙন রোধ ও অকালবন্যা থেকে রক্ষার এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। কু‌ষ্টিয়ার মিরপুর উপ‌জেলার তালবা‌ড়িয়া, বহালবা‌ড়িয়া ও বারুইপাড়া ইউনিয়‌নে ৯ কি‌লো‌মিটার এবং কুমারখালী উপ‌জেলার শিলাইদহ ইউনিয়ন অং‌শে ১ দশমিক ৫৩ কি‌লো‌মিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মা‌ণের প্রকল্প একনেকে গত মঙ্গলবার পাস হয়েছে। এতে ওই দুই উপজেলার নদীপারের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। 

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর মিরপুর উপ‌জেলার তিন ইউনিয়‌নের পদ্মা নদীতে পানি বাড়‌লে অকালবন্যা হয়। এতে পদ্মাপারের বহালবা‌ড়িয়া ইউনিয়‌নের সা‌হেবনগর, খা‌দেমপুর; তালবা‌ড়িয়া ইউনিয়‌নের রানাখড়িয়া এবং বারুইপাড়া ইউনিয়‌নের মির্জানগরসহ আশপাশের সহস্রাধিক মানু‌ষের ঘরবাড়ি ও ফস‌লি জ‌মি তলিয়ে যায়। প্রতিবছর বা‌ড়ি ও ফস‌লি জ‌মি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে এলাকাবাসীর দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে পদ্মা নদী‌তে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষেতি গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে) ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৭২ কো‌টি টাকার প্রকল্প অনু‌মোদন দি‌য়ে‌ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা। কু‌ষ্টিয়া পা‌নি উন্নয়‌ন বো‌র্ডের তত্ত্বাবধা‌নে এই বাঁধ নির্মাণ করা হ‌বে। এতে অকালবন্যায় নদীভাঙন ও ফসল নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবেন নদীপারের মানুষ।

শক্তিশালী ও স্থায়ী বাঁধ নির্মা‌ণে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা অনু‌মোদন দি‌য়ে‌ছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাশিদুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুষ্টিয়া

এক‌নে‌কে বাঁধ নির্মা‌ণের প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা জা‌নি‌য়ে‌ছেন এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা। এ উপল‌ক্ষে বৃহস্প‌তিবার সন্ধ্যায় মিরপুর উপ‌জেলার বারুইপাড়া মীর আবদুল ক‌রিম ক‌লে‌জ চত্বরে সমা‌বেশের আয়োজন করা হয়। 

পদ্মাপা‌রের মির্জানগর, সা‌হেবনগর ও খা‌দেমপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মাপা‌রের বিভিন্ন জায়গায় জিও ব‌্যাগ, ব্লক বসি‌য়ে ভাঙন রো ধের চেষ্টা করা হ‌চ্ছে। পা‌শেই ফসলের মাঠ থেকে বাঁধ অনেকটা উঁচু। আবার কোনো কোনো জায়গায় পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল কে‌টে পা‌নি বের করে দেওয়া হয়েছে। নদী থে‌কে ১০০ ‌মিটার দূ‌রেই মীর আবদুল ক‌রিম ক‌লেজ। ১৯৯৭ সা‌লে প্রতি‌ষ্ঠিত এই ক‌লেজ লা‌গোয়া কু‌ষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। অব‌্যাহত নদীভাঙ‌নে হু‌মকি‌তে প‌ড়ে‌ছে এই ক‌লেজ ও মহাসড়ক।

 মির্জাপুর গ্রামের কৃষক আজিজুল সরদার বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ করা হ‌লে আমাদের অনেক উপকার হবে। এখন আর সহজে ফসল পানিতে ডুবে যাবে না। সরকার আমাদের দিকে চেয়ে দাবি পূরণ করেছে। আমরা এলাকাবাসী সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’

বহালবা‌ড়িয়া গ্রামের হা‌নিফ মণ্ডল বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ হবে, এ কথা শোনার পর আমরা খুবই খুশি। এখন আর আমাদের কষ্টার্জিত বা‌ড়িঘর ও ফসল নষ্ট হবে না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কারণে অকালবন্যার হাত থেকে আমাদের এলাকার মানুষ রক্ষা পাবে।’ 

স্থায়ী বাঁধ নির্মা‌ণের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া রা‌জীব আলী বলেন, ‘পদ্মা নদীর ভাঙ‌নে জীবন শেষ। তাই এ বাঁধ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। এটাই এখন পদ্মাপা‌রের মানুষের পরম পাওয়া।’

কু‌ষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রা‌শিদুর রহমান বলেন, ‘শক্তিশালী ও স্থায়ী বাঁধ নির্মা‌ণে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা অনু‌মোদন দি‌য়ে‌ছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করছি, জানুয়া‌রি থে‌কে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এবারের একনেকে পাস না হলে মহাসড়কসহ মাঠের জমি রক্ষা করা মুশকিল হতো।’

এ বিষয়ে মিরপুর উপ‌জেলা প‌রিষ‌দের চেয়ারম‌্যান কামারুল আরে‌ফিন বলেন, ‘পদ্মাপারের মানু‌ষের দীর্ঘদি‌নের দা‌বি পূরণ হ‌তে যা‌চ্ছে। এ জন‌্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানা‌চ্ছি। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে তিন ইউনিয়‌নের লক্ষাধিক মানুষ নদীভাঙন থে‌কে থেকে রক্ষা পাবে।’