ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফুটবল খেলায় পটকা ফাটানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, একজন খুন

নিহত মো. ইয়াকুব
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে বিজয়ী দলের পটকা ফাটানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় একজন খুন হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ছয় থেকে সাতজন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার গ্রামে এ সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইয়াকুব (৩২)। তিনি নরসিংসার গ্রামের উত্তর পাড়ার মৃত মো. আবদুল্লাহর ছেলে। তিনি একজন পেশায় নির্মাণশ্রমিক ছিলেন।

হামলাকারীদের মধ্যে মো. তারেক, তাঁর বড় ভাই রায়হান ও ছোট ভাই মো. তারিফ ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরা নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ওয়ার্ড সদস্য কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। এর মধ্যে তারেক (৩৪) ইয়াকুবকে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত তারেক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাকরি করেন বলে জানা গেছে।

তারেক একপর্যায়ে ছুরি নিয়ে উত্তর পাড়ার ইয়াকুবকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে আরও সাত থেকে আটজন আহত হন।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ এপ্রিল সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার গ্রামে সামিউন বাছির ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। টুর্নামেন্টে গ্রামের ১৪টি দল অংশ নেয়। আজ ওই ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় নরসিংসার পশ্চিম পাড়া স্পোর্টিং ক্লাব ও নরসিংসার উত্তর পাড়ার টাইগার স্পোর্টিং ক্লাব অংশ নেয়। বিকেল পাঁচটায় খেলা শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। টাইব্রেকারে খেলার ফলাফল নির্ধারণ হয়। টাইব্রেকারে ২-১ গোলে নরসিংসার পশ্চিম পাড়া স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়। খেলা শেষ হওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা মাঠে পটকা ফাটানো শুরু করেন। এ সময় আয়োজকেরা মাইকে পটকা ফাটানো বন্ধের জন্য বারবার ঘোষণা দেন। সে সময় নরসিংসার গ্রামের উত্তর পাড়ার দ্বীন ইসলাম দিলু এগিয়ে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন দলের পশ্চিম পাড়ার খেলোয়াড়দের পটকা ফাটানো বন্ধ করতে বলেন। এ নিয়ে চিকিৎসক মো. তারেকের সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই দ্বীন ইসলামের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তারেকের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই রায়হান ও ছোট ভাই তারিফ সংঘর্ষে যোগ দেন। তারেক একপর্যায়ে ছুরি নিয়ে উত্তর পাড়ার ইয়াকুবকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে আরও সাত থেকে আটজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াকুবকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মো. কামাল (৩৮) ও জুয়েল মিয়া (২৭) নামের দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনার পর থেকে তারেক ও তাঁর পক্ষের লোকজন পলাতক রয়েছেন। তারেকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

সামিউন বাছির ফুটবল টুর্নামেন্টের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হারুন আল রশিদের ভাতিজা সামিউন বাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরভাবে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষ হয়েছে। পটকা ফাটানোকে কেন্দ্র করে একই গোষ্ঠীর দুই চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষ হয়েছে। চিকিৎসক তারেক ও তাঁর চাচাতো ভাই দ্বীন ইসলামের মধ্যে পূর্ববিরোধ ছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে পটকা ফাটানোকে কেন্দ্র করে একই গোষ্ঠীর দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষ হয়। পশ্চিম পাড়ার দলের সমর্থক চিকিৎসক মো. তারেকের ছুরিকাঘাতে ইয়াকুব নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে উপস্থিত লোকজনের সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।