কুমিল্লায় বিএনপি নেতাকে জড়িয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক দিনে ৫ মামলা

রাজিব আহমেদ। কুমিল্লার আদালতে আজ তাঁর বিরুদ্ধে এক দিনেই পাঁচটি মামলা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক দিনেই পাঁচটি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে চারটি মামলা হয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগে এবং একটি মামলা হয়েছে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে। মামলার বাদীদের মধ্যে চারজন কায়কোবাদের অনুসারী এবং একজন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী।

পাঁচটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রাজিব আহমেদ (৩৮)। তিনি মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের প্রয়াত জারু মিয়ার ছেলে। রাজিব আহমেদের দাবি, তিনি অনলাইন ‘সাংবাদিক’ হিসেবে একটি ফেসবুক পেজে ‘খবর প্রচার’ করেন।

আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন সময়ে এসব মামলা করা হয়েছে। চাঁদাবাজির চারটি মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মুরাদনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ। আর হুমকি দেওয়া মামলাটির আইনজীবী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। আদালত পাঁচটি মামলাই আমলে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী তৌহিদুর রহমান।

মামলায় রাজিব আহমেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে চরিত্রহনন, হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি এবং মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। বাদীদের দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁকে জড়িয়ে তাঁদের (বাদী) বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

আইনজীবী তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজির চারটি মামলা হয়েছে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি (মুরাদনগর) আদালতে। এর মধ্যে একটি মামলা আদালত এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন থানার ওসিকে। বাকি তিনটি মামলা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর হুমকি দেওয়ার মামলাটি হয়েছে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১০ নম্বর আমলি (চান্দিনা) আদালতে। এই মামলায় আদালত আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।

একটি মামলার বাদী মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের গোলাম মহিউদ্দিন। তাঁর মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার আরজিতে মহিউদ্দিন উল্লেখ করেছেন, তিনি ঢাকায় গার্মেন্টস, পরিবহনসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত ৩১ জানুয়ারি রামচন্দ্রপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত রাজিব আহমেদসহ কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করেছেন ওই ব্যক্তি।

মামলা দায়েরের পর কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গণে গোলাম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মূলত কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলাটি করেছেন মুরাদনগর উপজেলার দিঘলদী গ্রামের মো. বাবুল মিয়া (৬৫)। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স সিয়াম ট্রেডার্সে গিয়ে রাজিবের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে ৬ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে তাঁকে ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নামে রাজিব মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেন।

তৃতীয় মামলাটি করেন মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আলালের কান্দি গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিন (৫১)। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৮ জানুয়ারি মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সে গিয়ে রাজিব ও তাঁর সহযোগীরা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ তাঁকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়।

চতুর্থ মামলাটির বাদী মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কাঁঠালিয়াকান্দা গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৪৮)। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর বাজারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির টেলিকমে এসে তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন রাজিব ও তাঁর সহযোগীরা। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে ৬ ফেব্রুয়ারি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ তাঁর বিরুদ্ধে রাজিবের পরিচালিত একাধিক ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।

পঞ্চম মামলাটি করেছেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কৈকরই গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২৮)। মামলায় তিনি একজন সংবাদকর্মী বলে উল্লেখ করেন। মহিউদ্দীন উল্লেখ করেন, কয়েক মাস ধরে রাজিব আহমেদ তাঁর একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে উদ্দেশ্যমূলক কনটেন্ট তৈরি করে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ইতিপূর্বে মুরাদনগরের গুঞ্জর গ্রামের হাজি সোনা মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করে তাঁকে সামাজিক ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। এ নিয়ে জহিরুল ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নয়টা পর্যন্ত মুঠোফোনে তাঁকে জীবননাশের হুমকি দেন রাজিব।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাঁচটি মামলার আসামি রাজিব আহমেদ আজ রাতে প্রথম আলো বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক, গোমতী টিভি নামে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করি। কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নির্দেশে এসব মিথ্যা মামলা করেছেন তাঁর লোকেরা। মূলত মুরাদনগরে বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে এসব লোক বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাঁরা এখন কায়কোবাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসে অপকর্ম করছেন। আমি তথ্য-প্রমাণসহ তাঁদের বিরুদ্ধে অনলাইনে সংবাদ প্রচার করেছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।’