১২ দিনেও সন্ধান মেলেনি সাগরে নিখোঁজ অরিত্রর
কক্সবাজারের সাগরে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের (২২) সন্ধান ১২ দিনেও মেলেনি। তাঁর সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালিয়ে আসছেন ফায়ার সার্ভিস, পর্যটন পুলিশ, বেসরকারি সি-সেফ লাইফগার্ড ও সৈকতে নিয়োজিত বিচ কর্মীরা। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকেও ড্রোন উড়িয়ে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এর পরও অরিত্রকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁর বাবা-মা ও স্বজনেরা।
৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপের হিমছড়ির সৈকত এলাকায় সাগরে গোসলে নেমে ভেসে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। দুই ঘণ্টা পর হিমছড়ি সৈকতেই কে এম সাদমান রহমানের লাশ ভেসে আসে। পরদিন ৮ জুলাই সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলের প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ; কিন্তু এ পর্যন্ত অরিত্র হাসানের সন্ধান মেলেনি। অরিত্র হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে লাইফগার্ড, সৈকতকর্মী, ফায়ার সার্ভিস, পর্যটন পুলিশের একাধিক দল তল্লাশি অভিযান চালিয়ে আসছে। বিমানবাহিনীর মাধ্যমে ড্রোন উড়িয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়েছে; কিন্তু নিখোঁজ অরিত্রর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত তিন দশকে সাগরে গোসলে নেমে ৭০ জনের বেশি পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তিন দিনের মধ্যেই এসব মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে; কিন্তু কক্সবাজারে সাগরে ভেসে গিয়ে ১২ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার ঘটনা এটিই প্রথম। তিনি বলেন, ‘অরিত্রর সন্ধানে সাগরের পাশাপাশি উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা ও নদীর মোহনায় খোঁজ করা হচ্ছে।’
সি-সেফ লাইফগার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মী মোহাম্মদ ওসমান বলেন, গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের বলে রাখা হয়েছে, কোনো লাশ ভাসতে দেখলে যাতে জানানো হয়; কিন্তু গত কয়েক দিনে জেলেদের কাছ থেকেও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অরিত্রর বাবা সাকিব হাসান ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর স্ত্রী, ভাই ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে তিনি সমুদ্রসৈকতে ছুটে আসেন। ছেলেকে খুঁজে পাবেন সেই আসায় সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। জানতে চাইলে সাকিব হাসান আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘শুনেছি, সাগরে যা নিয়ে যায়, তা পুনরায় ফিরিয়ে দেয়; কিন্তু অরিত্রকে কেন ফিরিয়ে দিচ্ছে না। যেকোনো অবস্থায় আমি ছেলেকে চাই।’
সাকিব হাসান বলেন, ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে যাওয়ার কথা জানায় অরিত্র। তাঁকে যেতে বারণ করেছিলেন তিনি। পরদিন সকালে ফোনে জানতে পারেন, অরিত্র সাগরে নিখোঁজ। এরপর কক্সবাজারে ছুটে আসেন।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ অরিত্রর সন্ধান চালাচ্ছেন মা-বাবা, চাচা-চাচিসহ পরিবারের সদস্যরা। অরিত্রর মা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘এই অথই সমুদ্রে তো আমি আমার ছেলেকে রেখে যেতে পারি না। বাসায় একটা মুহূর্তও থাকতে পারব না। যেকোনো অবস্থায় আমি ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’