গাজীপুরের চন্দ্রায় যানবাহনের চাপ বাড়ছে
ঈদের বাকি আছে আরও পাঁচ দিন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। আজ বুধবার সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
যানজট নিরসনে গাজীপুর মহানগর, জেলা এবং হাইওয়ে পুলিশও নিয়েছে মহাপরিকল্পনা। যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে এরই মধ্যে পুলিশ দায়িত্বপালন শুরু করেছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়াও কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল ও রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া সড়ক নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এসব সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১ হাজার ৪০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চন্দ্রা ত্রিমোড় হয়ে উত্তরবঙ্গের প্রায় ১১৭টি রুটে যানবাহন চলাচল করে। কর্মসূত্রের কারণে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ গাজীপুর ও আশপাশের জেলায় বসবাস করেন। ঈদের ছুটিতে এসব অঞ্চলের মানুষ একসঙ্গে গ্রামের বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় সড়ক ও মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে।
এতে মহাসড়কের কোথাও থেমে থেমে আবার কোথাও দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে সড়কের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা দেয় যানজট। সব মিলিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে হয়। ঈদের এখনো কয়েক দিন বাকি থাকলেও অনেকে আগেই ছুটি নিয়ে রওনা হয়েছেন। আবার অনেকে যানজটের ভয়ে আগেই স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে আজ সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে।
উপজেলার রতনপুর এলাকার করনি নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার কর্মকর্তা কবির হোসেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কারখানার পাশেই আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন। আজ বেলা দেড়টার দিকে তাঁর সঙ্গে কথা হয় চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়। তিনি জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবড়ী এলাকায়। তাঁর ছুটি হবে ঈদের আগের দিন। তিনি বলেন, ‘সেদিন গাড়িতে ওঠা খুবই কষ্ঠকর হয়ে যাবে। তাই আজ স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি যাব ঈদের আগের দিন।’
কবির হোসেনের মতো একই কথা বলেন আবদুল খালেক। তিনি চাকরি করেন চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার ইকো টেক্সটাইল কারখানায়। তিনি বলেন, ‘ঈদের এক-দুই দিন আগে গাড়ি পাওয়া আর যুদ্ধে যাওয়া একই কথা। তাই পরিবারের সবাইকে এখনই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার যানবাহনের চাপ ছিল অনেক। যানবাহনের চাপের কারণে চন্দ্রা উড়ালসড়কের পর থেকে খাড়াজোড়া পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। এ ছাড়া চন্দ্রা উড়ালসড়কের পর থেকে নতুন করে একটি সড়ক ডিভাইডার নির্মাণ করায় যানবাহন চলাচলে আরও বেশি ব্যাঘাত ঘটছে। ওই এলাকায় ঘরমুখী মানুষেরও ভিড় লেগে আছে। কে, কোন গাড়িতে, কীভাবে উঠবেন—সেই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
চন্দ্রা ত্রিমোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকার শ্যামলী কাউন্টারের ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল থেকেই কাউন্টারে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। যাঁরা আগে থেকে টিকিট কেটেছেন, তাঁরা বাস পেলেও যাঁরা টিকেট কাটেননি, তাঁদের এখন সিট পাওয়া কষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। সড়কে যানবাহন ও মানুষের এই চাপ ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত থাকবে।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, চন্দ্রা এলাকায় অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। তারপরও যানবাহনের চাপের কারণে কিছু পয়েন্টে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে মানুষ তাদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শুরু করেছেন। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা বেড়েছে। মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে ভোগড়া থেকে টঙ্গীর কলেজগেট পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের মধ্যের লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখায় দুই পাশের যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এতে ওই সড়কে যেসব স্থানে বিআরটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে, সেসব স্থানসহ বোর্ডবাজার ও টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
বোর্ডবাজার এলাকার বাসিন্দা আমিন উদ্দিন বলেন, এত দিন বিআরটির জন্য করা মাঝখানের লেন দিয়েও যানবাহন চলাচল করেছে। এতে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। তবে কয়েক দিন ধরে বিআরটির মাঝখানের লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগড়া থেকে কলেজগেট পর্যন্ত যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। কোথাও কোথাও থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গাজীপুরের ভোগড়ার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগেও অল্প সময়ের মধ্যে ভোগড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চলে যাওয়া গেছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে দিনে তো যানবাহনের চাপ আছেই, সন্ধ্যার পর পুরো ১২-১৩ কিলোমিটার সড়ক ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে কোথাও কোথাও যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যানজট নিরসনে ৫০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। যানজট নিরসনের জন্য বিআরটি প্রকল্পের মাঝের লেন দিয়ে ময়মনসিংহগামী যানবাহনগুলো চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।